ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-০৮-২৩ ০০:১৭:৫০




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-০৮-২৩ ০০:১৭:৫০




জাতীয় পার্টিতে রহস্য

kzqghvva

জাতীয় পার্টিতে রহস্য

kzqghvva


দুপুরে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের প্রেস উইং পরিচালিত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে একটি বার্তা আসে। সেখানে দলীয় প্যাডে পাঠানো একটি চিঠিতে রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। ওই চিঠিতে আবার রওশন এরশাদেরই স্বাক্ষর ছিল। প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ কো-চেয়ারম্যানদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রওশন এরশাদ পার্টি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই বার্তা এবং চিঠির সূত্র ধরে গণমাধ্যমে খবর আসে জিএম কাদেরকে হটিয়ে রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। খবর প্রকাশের পর পার্টির কয়েকজন কো-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, তারা কোনো সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেননি। পুরো বিজ্ঞপ্তি ভুয়া। বিকাল পর্যন্ত এ নিয়ে চলে নানা আলোচনা। সন্ধ্যায় বিরোধী দলের নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ স্বীকার করেন প্রেস উইং থেকে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। যিনি এটি প্রচার করেছেন তাকে ৩ মাস আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। 

রাতে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ অবশ্য কাছে ভিন্ন কথা বলেন। তিনি বলেন, চিঠিটি তিনি পড়ে দেখেননি। তাকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান তিনি হননি। বিষয়টি ভুল হয়েছে। 

পার্টির মসনদ নিয়ে দিনভর পাল্টাপাল্টি ও বিভ্রান্তিকর এমন তথ্যে নানা রহস্য দেখা দেয়। ওদিকে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের অনুসারীরা বলছেন, গতকাল ইচ্ছাকৃতভাবেই সব করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় রাতে রওশন এরশাদপন্থিরা অবস্থান পাল্টিয়েছেন। তাদের দাবি, যে গ্রুপটি থেকে বার্তা প্রচার করা হয়েছে এটি বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃত প্রেস উইং। এই গ্রুপ থেকেই তাদের সব খবরাখবর প্রচার করা হয়েছে এতদিন। কাজী লুৎফুল কবির নামের একজন সাংবাদিক এই উইং তদারকি করেন। 

জিএম কাদের অনুসারী অনেকে বলছেন, পার্টি চেয়ারম্যান ভারত সফরে থাকা অবস্থায় এই ধরনের বিভ্রান্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। 

সর্বশেষ গত শনিবার বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে তিনি পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করেন। জিএম কাদেরের বিভিন্ন বক্তব্যের পত্রিকার কাটিংয়ের একটি ফাইলও রওশন এরশাদের হাতে ছিল। জিএম কাদের বিএনপি’র সঙ্গে জোট করতে পারেন এমন কথাও বলেন রওশন এরশাদ। 

ওদিকে ২২শে আগস্ট রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমি বেগম রওশন এরশাদ, এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যান এই মর্মে ঘোষণা করছি যে, পার্টির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তক্রমে দলের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।  রওশন এরশাদের প্রেস উইং এর বার্তায় বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গত বছরের ৭ই ডিসেম্বর। সেই সভায় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব রওশন এরশাদকে অর্পণ করা হয়। দলের নেতারা বলছেন, ওই দিন এমন কোনো সভা হয়নি। 



প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) যখন দেশে অসুস্থ ছিলেন তখন আমরা তাকে দেখতে যাই। তখন আমরা কে কে গিয়েছিলাম সেই স্বাক্ষর। স্বাক্ষর করা কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, মূল দ্বন্দ্ব ভাবি-দেবরের মধ্যে। আমরা দলের ঐক্য চাই। সামনে নির্বাচন। আমাদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা জরুরি। মতপার্থক্য পরিবারে থাকতেই পারে। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক না। তিনি বলেন, এটা ছড়ালো কীভাবে জানি না। তবে যারাই করেছেন এটা ভুল করেছেন। এটা অগণতান্ত্রিক হয়েছে। কো-চেয়ারম্যান আবু হোসেন বাবলা বলেন, এটি বানোয়াট ও মিথ্যা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাহেব আছেন, থাকবেন। বেগম রওশন এরশাদ ম্যাডাম আমাদের মায়ের মতো। তিনি আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।



বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, বেগম রওশন এরশাদ এ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে কিছুই জানেন না। নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা তো প্রশ্নই আসে না। আমাদেরই কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে ওই বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে  ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কেউ ইচ্ছে করলেই চেয়ারম্যান ঘোষণা করতে পারেন না। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়। 

সার্বিক বিষয়ে পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে একটি নিউজ এসেছে, যে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এটি সত্য নয়। যে কয়জন কো-চেয়ারম্যানদের নাম ব্যবহার করে নিউজটি করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কো-চেয়ারম্যানবৃন্দ জানিয়েছেন, তারা এমন কোনো সিদ্ধান্তে সহায়তা করেননি এবং স্বাক্ষর করেননি।

তিনি আরও বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কেউ ইচ্ছে করলেই চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দিতে পারে না। গঠনতন্ত্রের বাইরে কেউই কিছু করতে পারবে না। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছেন। জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃৃত কিছু ব্যক্তি ম্যাডামের নাম ব্যবহার করে এমন একটি ফেক নিউজ দিয়েছে। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং এমন ঘটনার সুযোগ নেই।









মন্তব্য