ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-২৭ ০১:৫৪:২৮




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-২৭ ০১:৫৪:২৮




  • জাতীয়
  • ঈদুল আজহায় ১৫ দিনে ৪৫৮ প্রাণহানি, গত বছরের দেড় গুণ.

ঈদুল আজহায় ১৫ দিনে ৪৫৮ প্রাণহানি, গত বছরের দেড় গুণ

ঈদুল আজহায় ১৫ দিনে ৪৫৮ প্রাণহানি, গত বছরের দেড় গুণ


 ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৫ দিনে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫৮ জন নিহত এবং আরও এক হাজার ৮৪০ জন আহত হয়েছেন বলে ‍জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দুর্ঘটনা ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বাড়লেও প্রাণহানি বেড়ে হয়েছে দেড় গুণের বেশি। আহতের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় সাড়ে তিন গুণ।


যাত্রী কল্যাণ সমিতির গত বছরের ঈদুল আজহার সময়কার তথ্য বলছে, ওই বছর ঈদযাত্রায় (২২ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিন) দেশের সড়ক-মহাসড়কে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ও ৫৪৪ জন আহত হয়েছিলেন। সে হিসাবে এ বছরের ঈদুল আজহার ঈদযাত্রায় সড়কে প্রাণহানি বেড়েছে ৫৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, আহতের সংখ্যা বেড়েছে ২৩৮ দশমিক ২৩ শতাংশ।


বুধবার (২৬ জুন) ঢাকায় বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষন ২০২৪’ প্রকাশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। প্রতি বছরের মতো এবারও সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।


এদিকে আরেক বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঈদুল আজহার আগে-পরে ১১ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ১৩ দিনে দেশে ২৫১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৪৩ জন। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, ১১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ২৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৩০১ জন।


বুধবার সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, এ বছর ঈদের আগে-পরের এই ১৫ দিনে রেলপথে ২২টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌ পথে ছয়টি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত, ছয়জন আহত হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন আরও ছয়জন।

সব মিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌ পথে সম্মিলিতভাবে ৩৩৭টি দুর্ঘটনায় ৪৮৮ জন নিহত ও এক হাজার ৮৫০ জন আহত হয়েছেন। গত বছর সড়ক, রেল ও নৌ পথে সম্মিলিতভাবে ৩১২টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩৪০ জন, আহত হয়েছিলেন ৫৬৯ জন।


গত বছর ঈদুল আজহার এই সময়টিতে সড়ক দুর্ঘটনায় শীর্ষে ছিল ট্রাক, পিকআপ ও কভার্ড ভ্যান। তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির এ বছরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ বছর দুর্ঘটনার শীর্ষে ছিল মোটরসাইকেল। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ১৩২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩০ জন নিহত ও ৫৯৯ জন আহত হয়েছেন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার মোট দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ৭১ শতাংশ, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের হার মোট নিহতের ২৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহতের হার মোট আহতের ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।


বুধবার ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ছবি: সারাবাংলা


এ সময়ে সড়কে দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৫১ জন চালক, ১১ জন পরিবহণ শ্রমিক, ৪৮ জন পথচারী, ৬১ জন নারী, ২৪টি শিশু, ১৪ জন শিক্ষার্থী, একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, তিনজন শিক্ষক, দুজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।


মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহণ ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে মানুষের যাতায়াত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমেছে। বর্তমান সরকারের ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। ঈদের আগে তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় যাত্রীর চাপ কিছুটা ভাগ হয়ে গেছে। দেশে ঈদযাত্রায় মোট যাতায়াতের প্রায় ৭ থেকে ৯ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেলে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, সরকার কৌশলগত পরিবহণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদাসীন। তাই ছোট যানবাহন বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা। গণমাধ্যমে এখন সংঘটিত দুর্ঘটনার সঠিক চিত্র আসে না। এবারের ঈদে আমরা গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে সারা দেশে হতাহতের সংখ্যা পেয়েছি মাত্র এক হাজার ৯৮ জন। অথচ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালেই ১৪ দিনে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৭৮ জন। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ৯ হাজার হাসপাতালে চিত্র অনেক ভয়াবহ।


সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে গবেষণার আহ্বান জানিয়ে মোজাম্মেলহক বলেন, নতুন সড়ক পরিবহণ আইন কার্যকর হলেও কেন সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না, সরকারিভাবে তার অডিট হওয়া দরকার। সড়ক নিরাপত্তায় কোনো গবেষণা নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিরা চিহ্নিত হচ্ছে না। সড়কে ত্রুটির জন্য কোনো প্রকৌশলী জবাবদিহি করছেন না। তদন্ত দুর্বলতা, আইনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতরা আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে সদিচ্ছা থাকলেও সরকার সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারছে না।


এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সংগঠনের সহসভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, বিশিষ্ট সমাজকর্মী মোহাম্মদ মহসিনসহ অনেকে।









মন্তব্য