ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৪-১০-২৯ ০১:০৬:২৬




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৪-১০-২৯ ০১:০৬:২৬




  • অর্থনীতি
  • ব্যাংকখাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে হাসিনার ঘনিষ্ঠরা: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস.

ব্যাংকখাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে হাসিনার ঘনিষ্ঠরা: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস

ব্যাংকখাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে হাসিনার ঘনিষ্ঠরা: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ধনকুবের ও ব্যবসায়ীরা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সহায়তায় ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ‘‘অর্থাৎ সবল ব্যাংকগুলো দখলে নিতে হাসিনার ঘনিষ্ঠ ধনকুবেরদের সাহায্য করেছে ডিজিএফআই।’’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে (এফটি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক দখলের পর নতুন শেয়ার হোল্ডারদের ঋণ ও আমদানি খরচ বেশি দেখিয়ে প্রায় ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা) পাচার করা হয়েছে।

যেকোনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেই এটি সবচেয়ে বড় এবং সর্বোচ্চ ব্যাংক ডাকাতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মাত্রায় আর কোথাও ব্যাংক লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। আর এর পেছনে ছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। এবং গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা (ব্যাংকের সাবেক সিইওদের) মাথায় বন্দুক না ধরলে এ কাজ করা যেত না।’

গভর্নর বলেন, এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম আর তার সহযোগীরা ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ‘অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার’ করেছেন। ‘প্রতিদিনই তারা নিজেদেরকে ঋণ দিচ্ছিলেন,’ বলেন তিনি।

তবে এস আলমের পক্ষে আইনজীবী প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান এক বিবৃতিতে বলেছে, এস আলম গ্রুপ গভর্নরের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে, মনসুরের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।

প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এস আলম গ্রুপ ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রচারণা চালাচ্ছে। গভর্নরের অভিযোগকে বিস্ময়কর এবং অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে, ‘এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে।’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি; ডিজিএফআইয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি। এছাড়াও শেখ হাসিনার সহযোগীদের বিদেশে থাকা সম্পদের তদন্তে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন তিনি বলেও গত মাসে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন তিনি। হাসিনার শাসনামলে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, হাসিনার শাসনামলে ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যদেরকে ‘বাড়ি থেকে তুলে এনে’ হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারপর ‘বন্দুকের মুখে’ তাদের ব্যাংকের সমস্ত শেয়ার ‘এস আলমের কাছে’ বিক্রি করতে এবং পরিচালকের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলতেন। ‘একের পর এক ব্যাংকে তারা এ কাজ করেছে,’ বলেন গভর্নর। একটি ব্যাংকের সাবেক সিইও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, জোরপূর্বক ব্যাংক দখলের অংশ হিসেবে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।

দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক সিইও মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ‘তৎকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা’ তাকে চাপে রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশ করা ব্যক্তিদের পর্ষদ সদস্য করতে তাকে চাপ দেওয়া হয়। এছাড়া ‘সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত লোকজন’ ব্যাংকটির একজন বিদেশি পরিচালকের হোটেল রুমে তল্লাশি চালান।

মান্নান বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বোর্ড সভায় যাওয়ার পথে তাকে তুলে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য পুরো একটি কার্যদিবস বসিয়ে রাখা হয়।

এ বছরের সেপ্টেম্বরে মান্নানকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইসলামি ব্যাংক থেকে পদত্যাগের ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা ভুয়া স্টেশনারি নিয়ে ব্যাংকের চিঠি তৈরি করে। আমাকে একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল।’

গত এক দশকে অনেকগুলো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এ শিল্পগোষ্ঠীর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ সাতটি ব্যাংকে তাদের ‘উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ’ রয়েছে।

আহসান এইচ মানসুর বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেউলিয়া হওয়া প্রায় ডজনখানেক ব্যাংকের অডিট শেষ করার পর পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আদালতে প্রমাণ হিসেবে এই অডিট প্রতিবেদন ব্যবহার করতে চাই।’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ব্যাংকগুলোর শেয়ার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা এসব ব্যাংকের শেয়ার ‘ভালো মানের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীর’ কাছে বিক্রি করে ব্যাংকগুলোতে ফের মূলধনের জোগান দেওয়া। ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

উল্লেখ্য যে, টানা দেড় দশকের বেশি সময় পর ক্ষমতা ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় দেশে ব্যাপক দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর লোপাট হওয়া অর্থের সন্ধান পেতে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।









মন্তব্য