ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৪-০২-০৭ ২২:৫২:৪৬




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৪-০২-০৭ ২২:৫২:৪৬




  • জাতীয়
  • বাংলাদেশ এখন অতটা খারাপ নেই: প্রধানমন্ত্রী.

বাংলাদেশ এখন অতটা খারাপ নেই: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ এখন অতটা খারাপ নেই: প্রধানমন্ত্রী



বাংলাদেশ এখন অতটা খারাপ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডলারের সংকট এখন ঠিক সেরকম নেই, রপ্তানি আয়ও খুব একটা কমেনি বলেও তিনি জানান। কোনো অপশক্তিই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারার উন্নয়ন অভিযাত্রার পথ রুদ্ধ করতে পারবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নস্নাত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণের বিরামহীন পথ পরিক্রমায় আমরা সবাই সামিল হয়েছি। আমাদের এই কষ্টসাধ্য কিন্তু অঙ্গিকারদীপ্ত স্বপ্নযাত্রায় বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের অবিচল আস্থা ও অকুণ্ঠ সমর্থন আছে। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে জনগনকে নিয়ে আমরা আমাদের পবিত্র সংবিধান, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছি, ভবিষ্যতেও রাখবো, ইনশাল্লাহ্। 


বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ভোলা-২ আসনে আওয়ামী লীগম দলীয় সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুলের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। 


লক্ষীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল্লাহর লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বাধাগ্রস্থ করতে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা গত বছর ২৮ অক্টোবর থেকে সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে ৬০০ এর অধিক যানবাহনে ভাংচুর করেছে এবং নাশকতার ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছে। হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত বছর ২৮ অক্টোবর হতে এ ধরনের সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে ৬০০ এর অধিক যানবাহনে ভাংচুর যার মধ্যে ১৮৪টি যাত্রিবাহী বাস; ৪৮টি ট্রাক, ২৮টি কাভার্ড ভ্যান/মালবাহী লড়ি/কনটেইনার, ৩টি সিএনজি, ৪টি প্রাইভেট কার, ১১টি পিক আপ ভ্যান। ৫টি ট্রেন- যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন, ঢাকা কমিউটার ট্রেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন, টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন। ১৫টি মোটর সাইকেল- ৩টি লেগুনা, ১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস (মধ্যরামপুরা, ফেনী): ১টি অটোরিক্সা।


এছাড়া ১টি উচ্চ বিদ্যালয় (চর শাহা উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাগাজী, ফেনী): ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহু বসতবাড়ি, ১টি বৌদ্ধ মন্দির (রাম-কক্সবাজার)। ১টি নৌকা, সর্বমোট ৩২৮টি যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আহত হরতাল-অবরোধে ড্রাইভার, হেলপার, পুলিশ, বিজিবি, শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু লোক নিহত, আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছে এবং বিএনপির ক্যাডাররা অসংখ্য যানবাহন জ্বালিয়ে দিয়েছ। 

প্রধানমন্ত্রী জানান, হরতাল অবরোধের নামে নাশকতার ঘটনায় সারাদেশে ১৩জন নিহত হয়েছে। যার মধ্যে ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় নিহত হয়েছে ৯ জন, বিজিবির ২ জন আহত এবং ১টি রিকুইজিশনকরা যানবাহনের ক্ষতি সাধন করা হয়। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন জেলায় ৪৫ জন সদস্য আহত হয়েছে। বিআরটিসি বাস ডিপোর বাস রক্ষা করতে গিয়ে ১ জন আনসার সদস্য ইট পাটকেলের আঘাতে আহত হয়। এদের মধ্যে ২ জন আনসার সদস্য হোসেন আলী ও সুমন আলী বিএনপি-জামাতের নেতা-কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, অগ্নি-সন্ত্রাস, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড-হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন আইনী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 


মাদারীপুর-২ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের নাশকতামূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সারাদেশে ২০১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮ হাজার ১০৫ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৯৬৭ টি মামলার বিচার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোতে এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৪১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০০৪ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত যেসব মামলা দায়ের হয়েছে, সেসব মামলার তদন্ত কাজ চলমান আছে। সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির গর্ব ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা বহুমুখী সেতু। যা ২০২২ সালের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এবং ২০২২ সালের ২৬ জুন থেকে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। উদ্বোধনের পর  থেকে সেতু পারাপারকারী যানবাহন থেকে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। উদ্বোধনের পর এক বছরেই (২০২৩ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত) আয় হয়েছে প্রায় ৭৯৮ কোটি ২৩লাখ ১৬হাজার টাকা এবং দৈনিক গড় আয় প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে। দক্ষিনাঞ্চলের ১৯টি জেলার সঙ্গে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। 



এছাড়া বছরে শ্রম শক্তির প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশের কর্মসংস্থান ঘটেছে। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতির এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বছরে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ দামের পণ্য ও সেবা উৎপাদন/রপ্তানি করা সম্ভব হবে। উম্মে কুলসুম স্মৃতির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি শিল্প কারখানা করতে চায় তারা যেন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জায়গা নিয়ে নেয়। যত্রতত্র যেন শিল্প কারখানা গড়ে না তোলে। আর যদি গড়ে ওঠে তাহলে সেখানে গ্যাস, পানি বিদ্যুৎ বা কোন সার্ভিস তারা পাবে না। আমরা চাই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি জমি সংরক্ষণ করতে। আলী আজমের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ায় গত ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৮ টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন বলে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ২৫ টি আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, বিশ্বের ৪১ টি দেশ থেকে ১২৬ জন পর্যবেক্ষক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে আসেন। সরকারিভাবে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৪৫ জন এবং স্বাধীনভাবে ৭৯ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক এ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেন। 


এছাড়া বিভিন্ন দেশের ১৮ জন নির্বাচন কমিশনার ও তাদের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ৮৪ টি সংস্থার ২০ হাজার ৭৭৩ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ২৯৯ টি আসলে ২৮ টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী এবং ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নেন। সংসদে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সব প্রশাসনিক, আর্থিক, আইনি, রেগুলেটরি ও লেজিসলেটিভ এবং নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বিরোধীদলীয় হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, আমাদের নিজেদের গ্যাস আছে। কুপ খননের মাধ্যমে নতুন গ্যাস ফিল্ড পেয়েছি। বাজারজাত করতে একটু সময় লাগবে। আপাতত ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ইণ্ড্রাস্ট্রীতে নেবার ব্যবস্থা করেছি। এটা শুরু হয়েছে, ভালভাবে চালু হলে গ্যাস সঙ্কট আর থাকবে না। এছাড়া মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। যেসব ব্যাংক ভালভাবে চালাতে পারছে না সেগুলোকে আমরা একীভূত করে দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা পদ্মা ব্যাংকে একীভূত করেছি। এভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, বসে নেই। 


সরকার দলীয় সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকেই প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পণা তৃণমূলকে সামনে রেখে আমরা করছি। উন্নয়ন থেকে কোন অঞ্চল বঞ্চিত হয়নি। সম্পুরক প্রশ্নের উত্তরে দেশের অর্তনৈতিক অবস্থার কথা জানিয়ে প্রদানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে গেলাম, যার ফলে আমাদের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার ফলে আমাদের কিছু খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হতে হয়েছে, কিছু সংকুচিত করতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা এখন অতটা খারাপ নেই। ডলারের সংকট যথেষ্ট ছিল, এখন ঠিক সেরকম সংকট নেই। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা মনিটরিং বাড়িয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে এলছি খোলার নামে যতটা প্রয়োজন নয় তার চেয়ে বেশি দিয়েও অনেকেই এলসি খুলে, কিন্তু ওই টাকাটা ফেরত আসে না। এ কারণে সরকার পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্লুমবার্গের মূল্য তালিকা দেখে, সেটা মনিটর করে এলসি খুলতে দেয়া হয় বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এলসি খুলতে যে অসুবিধার কথা বলা হচ্ছে তা নয়, আগে যেভাবে যখন-তখন খোলা হত, ইচ্ছামত হচ্ছে না, সেটা নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। 


প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি আয় খুব একটা কমেনি। যেসব দেশে আমরা রপ্তানি করি, এমনকি যেগুলো খুব ধনী দেশ তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে, বাজার সংকুচিত হয়েছে, সেখানে অর্ডার কমেছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা খুব চাপে আছে, তাদের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তারাই ফলাফলে হয়তো কিছুটা কমেছে। রপ্তানি আয় বড়াতে সরকার বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিকল্প বাজার খুঁজে বেড়ানো, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে ব্যবস্থা নিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কৃষক যথাযথ উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পেলে সমস্যা হবে। মূল্য বৃদ্ধি পেলে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ কষ্ট পাবে।









মন্তব্য