ডেইলি বাংলা টাইমস :
প্রকাশিত : ২০২৫-১১-২০ ১৬:৩৩:৪০
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আবারও সংবিধানে ফিরল আপিল বিভাগের রায়ে। বহুল আলোচিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট করেছে, সামনে অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে, আর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কার্যকর হবে চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারকের পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর রায় ঘোষণা করে। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, জুবায়ের রহমান চৌধুরী, মো. রেজাউল হক, এস এম ইমদাদুল হক, এ কে এম আসাদুজ্জামান ও ফারাহ মাহবুব এই বেঞ্চের অন্য সদস্য ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতকক্ষ ছিল আইনজীবী ও সাংবাদিকে পূর্ণ।
রায়ের পটভূমিতে দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময়ের আইনি লড়াই রয়েছে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করে, যার অধীনে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আপিল বিভাগ সংশোধনীটি বাতিল ঘোষণা করলে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটে এবং একই বছরের ৩০ জুন সংসদে পাস হয় পঞ্চদশ সংশোধনী।
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ধারা বাদ পড়ার পরই নানা রাজনৈতিক বিতর্ক, বর্জন আর সংকট দেখা দেয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধীদলগুলোর দাবি আরও জোরালো হয়। সরকার পরিবর্তনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিভিউ আবেদন করেন। এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেনও পৃথকভাবে রিভিউ আবেদন করেন।
আদালত গত ২১ অক্টোবর থেকে টানা ১০ দিনের শুনানি শেষে ২০ নভেম্বর রায় দেয়। রায়ে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের আপিল বিভাগের রায়টি স্পষ্ট ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হলো। এর ফলে সংবিধানের চতুর্থ ভাগের পরিচ্ছদ ২ (ক)-এ থাকা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পুনরুজ্জীবিত হলো।
রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের পথ তৈরি হলো। তার ভাষায়, “এই রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরত এসেছে, মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে।”
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায় সমাজে গভীর ক্ষত তৈরি করেছিল। মৃত ব্যক্তির ভোট দেওয়া, অনিয়ম, প্রশাসনিক অস্থিরতা—সব তৈরি হয়েছিল সে সিদ্ধান্তের ফলে।
বিচারাধীন থাকা এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আবারও সামনে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার গুরুত্ব। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করে। এরপর সেনানিয়ন্ত্রিত ২০০৭–২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ২০০৬ সালের সংকটও রাজনৈতিক দলগুলোকে বারবার টেনে আনে এই ব্যবস্থার আলোচনায়।
নতুন রায় অনুযায়ী, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ দৃশ্যপটে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর হতে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা।