ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-১০-১৫ ০১:৪২:৪৩




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-১০-১৫ ০১:৪২:৪৩




  • জাতীয়
  • দুর্নীতি- স্বজন প্রীতিকে উন্নয়নের মূলবাধা মনে করে যুবরা , জরিপের তথ্য.

দুর্নীতি- স্বজন প্রীতিকে উন্নয়নের মূলবাধা মনে করে যুবরা , জরিপের তথ্য

দুর্নীতি- স্বজন প্রীতিকে উন্নয়নের মূলবাধা মনে করে যুবরা , জরিপের তথ্য


 দেশের ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ-তরুণী মনে করেন, দেশে উন্নয়নে প্রধান বাধা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি। আর ৪৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। এক্ষেত্রে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো ‘নিবর্তনমূলক’ আইনকে মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এমনকি যুবদের প্রত্যক্ষ ভোটেও সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করার বিষয়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক যুব ভোট দিয়েছেন। একই সঙ্গে যুব বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করা উচিত বলে মনে করেন তরুণদের একটি বড় অংশ।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত যুব সম্মেলনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। রাজধানীর খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে গতকাল এ সম্মেলন আয়োজন করে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। এতে দেশব্যাপী যুবসমাজের ওপর পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।


জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবকে উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সাড়ে ৪৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। এছাড়া প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় প্রাধান্যকে দায়ী করেছেন ৩২ দশমিক ছয় শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করেছেন ২৮ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ।


চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক মাসে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পাঁচ হাজার ৭৫ জন যুব জনগোষ্ঠী অনলাইন জরিপে অংশ নেন। এছাড়া ২৮টি তরুণ সংগঠন, ২০টি ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন ও গত ১০ বছরের লিটারেচার রিভিউয়ের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।


এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি, যাদের বড় অংশই তরুণ। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় জনশক্তি যুবরা। এই যুব জনশক্তির কণ্ঠস্বর দেশের নীতি প্রণয়নে কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, তা যাচাই করতেই এ আয়োজন।


দেশে প্রতি দশকে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের সংখ্যা ও অনুপাত বাড়ছে। ২০০১ সালে ছিল এই বয়সভিত্তিক জনগোষ্ঠীর অনুপান ছিল ২৯ শতাংশ, ২০১১ সালে তা সাড়ে ২৯ শতাংশ এবং ২০২২ সালে সাড়ে ৩৩ শতাংশে উন্নীত হয়।


দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে নতুন ভোটার হয়েছেন সাড়ে তিন কোটি যুব। যুবসমাজের আশা-আকাক্সক্ষা আগামী দিনের বাংলাদেশে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যুক্ত করতে আমরা কতটুকু সফল, কতটুকু কার্যকর, কতটুকু ফলপ্রসূÑএই জিজ্ঞাসাটা আমাদের কাছে বারংবার আসছে। এই জিজ্ঞাসার ভেতরে একটা বড় জিজ্ঞাসা হলোÑরাষ্ট্র, দেশ, রাজনীতি, সমাজনীতি ও পেশা পরিচালনার ক্ষেত্রে ঘর-সমাজের ভূমিকা আমরা বজায় রাখতে পারছি কি না এবং সেই ভূমিকা বাড়ানোর একটা বড় জায়গা হলো গণতন্ত্রের চর্চা করা। তিনি বলেন, সামনের নির্বাচনে আমরা যুবসমাজের অংশগ্রহণকে আরও জোরদারভাবে দেখতে চাই, আশা করি নির্বাচন নিয়ে যেসব সংশয়, বিভ্রান্তি বা উদ্বেগ আছে, সেগুলো আগামী দিনে কেটে যাবে।


 

জরিপে দেখা গেছে, তরুণরা সম্প্রতি অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার, শিক্ষায় অভিগমন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধির মতো বিষয়ে সাফল্য এসেছে বলে মনে করেন। যুব জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উন্নয়নের অগ্রাধিকার হিসেবে দুর্নীতি দমন, জবাবদিহিতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেছেন ৫৬ দশমিক দুই শতাংশ। ৫৫ দশমিক চার শতাংশ উল্লেখ করেছেন মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির কথা। ৪০ দশমিক দুই শতাংশ অংশগ্রহণকারী তরুণ দেশ ও দেশের বাইরে কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিয়েছেন।


জরিপে দেখা যায়, ৬০ দশমিক চার তরুণ মনে করেন, রাজনীতিতে জড়িত তরুণরা কার্যত সাধারণ তরুণদের প্রায় সবসময় প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যদিকে ৩০ শতাংশ মনে করেন যে তারা একদমই তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করেন না। ২৪ দশমিক দুই শতাংশ মনে করেন, প্রতিনিধিত্ব করলেও তা খুবই কম। ৩৭ দশমিক তিন শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, নিজ নিজ এলাকায় ও জাতীয় নীতিনির্ধারণে রাজনৈতিক নেতারা সাধারণ তরুণদের সঙ্গে নিজ থেকে আলোচনা একদমই করে না। ২১ দশমিক সাত মনে করেন আলোচনা করলেও তা খুবই কম।


৬৭ দশমিক আট শতাংশ যুব মনে করেন, সরকারের বাইরে থাকা সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) অথবা নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বা তাদের মাধ্যমে উন্নয়ন ও নীতিতে মতামত প্রকাশ করা সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করার বিষয়টি সমর্থন করেছেন ৫৯ দশমিক ছয় শতাংশ।


৬০ দশমিক চার শতাংশ যুব জরিপ অংশগ্রহণকারী বেকারদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করার পক্ষে মত দিয়েছেন। ৪৮ দশমিক এক শতাংশ শ্রমিকদের জন্য মৌলিক জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে সক্ষম এমন মজুরি প্রদান করার পক্ষে মত দিয়েছেন। ৪৮ দশমিক এক শতাংশ যুব উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা এবং ৪১ দশমিক চার শতাংশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা বাতিল করার দাবি জানান। এ বিষয়টি গতকালকের অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত প্রত্যক্ষ ভোটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়।


জরিপে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে তরুণদের মতামত উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ১৮ দশমিক সাত শতাংশ অংশগ্রহণকারী সুযোগ পেলে স্থায়ীভাবে বিদেশে চলে যেতে চান। উচ্চশিক্ষিতের মধ্যে এ ধরনের মনোভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। আরও ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী অস্থায়ীভাবে চাকরি বা পড়াশোনা করতে বিদেশে যেতে চান। ৫৩ দশমিক চার শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, যুবসমাজ আগামী দিনে দেশের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। ৪৬ শতাংশ মনে করেন, যদি নীতি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে তাহলে তরুণরা প্রস্তুত।


যুব সম্মেলনে জরিপের ফলাফল উপস্থাপনের পাশাপাশি সংসদীয় বিতর্ক আয়োজন করা হয়। এরপর রাজনীতিবিদদের অংশগ্রহণে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ, আওয়ামী লীগ-দলীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু ও কাজী নাবিল আহমেদ এবং জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান। তারা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে যুবসমাজের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়ে নিজ নিজ দলের অবস্থান তুলে ধরেন।









মন্তব্য