ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-০৯-০৫ ১০:৪৩:৫২




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-০৯-০৫ ১০:৪৩:৫২




  • স্বাস্থ্য
  • বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়েছে: ডব্লিউএইচও.

বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়েছে: ডব্লিউএইচও

বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়েছে: ডব্লিউএইচও


চলতি মৌসুমে বাংলাদেশে ডেঙ্গু এন্ডেমিক বা স্থানীয়ভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিস্থিতি পর্যালোচনা রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়। বর্ষা মৌসুমে যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তা উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই তথ্য জানায়।


সংস্থাটি আরও জানায়, বিগত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যায় ঊর্ধ্বগামী হয়ে বাড়তে থাকে।


চলতি বছরের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এক লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ জন আক্রান্ত ও ৫৬৯ জনের মৃত্যুর তথ্যও উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারি (এনডেমিক) হয়ে উঠেছে এমন কথা প্রতিবেদনটিতে বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছে ডব্লিউএইচও।


সংস্থাটি জানায়, সারাদেশের ডেঙ্গু সংক্রমণের এই তথ্য পাওয়া গেছে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। এটি বাংলাদেশের ডেঙ্গু সংক্রমণের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য।


সংস্থাটি আরও জানায়, সংক্রমণের মাত্রা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর আলাদাভাবে বাড়তি প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক্ষেত্রে তার সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিস্থিতি পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করেছে। এই পর্যালোচনা রিপোর্টে ২৪ এপ্রিল থেকে তথ্য বিবেচনা করা হয়। ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এপি-উইক ১৭ বিবেচনা করে এই প্রতিবেদন দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।


সংস্থাটি জানায়, ২০২৩ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন (নিলমার) ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে ৩২৫টি নমুনার সেরোটাইপ বা ধরণ পরীক্ষা করা হয়। এর মাঝে ৬২ শতাংশ ডেনভি-২, ২৯ শতাংশ ডেনভি-৩ ও ১০ শতাংশ নমুনায় ডেনভি দুই ও তিন সেরোটাইপ পাওয়া গেছে।



সংস্থাটি আরও জানায়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর ডেনভি-২ ধরন ছিল বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রধান কারণ। তবে পরবর্তী সময়ে সংক্রমণের প্রধান কারণ হয়েছে ডেনভি-৩। বর্তমানে ডেনভি-২-কে সংক্রমণের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে দ্বিতীয়বার যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে বলেও জানায় ডব্লিউএইচও।


সংস্থাটি জানায়, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ করা শয্যা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী ও ব্যবস্থাপনা সবধরণের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে বিতরণ করেছে।



সংস্থাটি জানায়, চলতি মৌসুমে ৪১ শতাংশ মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করা দেখা গেছে, তাদের তুলনামূলকভাবে বড় শহর বিশেষ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ২৭ আগস্ট পর্যন্ত যারা মারা গেছে তাদের মাঝে ৬৪ শতাংশ ছিল শক সিনড্রোমে। এছাড়া ডেঙ্গু সিনড্রোম ২৩ শতাংশ, ডেঙ্গু হেমোরোজিক ফিভার বা জ্বরে ৯ শতাংশ ও চার শতাংশ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগী ডেঙ্গুতে মারা যান।


ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ঢাকার তুলনায় অন্যান্য এলাকায় বেশি। অর্থাৎ মৃতদের মাঝে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের ৬৩ শতাংশ শক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিল। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে এই হার ছিল ৭৩ শতাংশ।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু নমুনা পরীক্ষার কিট, আইভি ফ্লুইডস এবং অন্যান্য ল্যাবরেটরি সামগ্রীর বিষয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে দ্রুত রোগ শনাক্ত করণের জন্য। এখন পর্যন্ত ১৩টি ব্যাচে সারাদেশের ৩২৫ জন চিকিৎসককে ডেঙ্গু রোগের ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।


উল্লেখ্য, মহামারির সংজ্ঞায় এনডেমিক, প্যানডেমিক ও এপিডেমিকের পার্থক্য নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইলম্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ। তারা বলছে, এনডেমিক বা মহামারি বলতে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) ব্যাখ্যায় একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় রোগের ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধির হারকে বলা হয়। রোগের হার স্পষ্টভাবে একটি সম্প্রদায় বা অঞ্চলে প্রত্যাশিত ঘটনার চেয়ে বেশি।


তবে ডব্লিউএইচওর ব্যাখ্যায় প্যানডেমিক বা বৈশ্বিক মহামারি হলো এমন একটি রোগ, যা বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বিভিন্ন দেশ ও জনসংখ্যাকে সংক্রমিত করে। ডব্লিউএইচও তখনই প্যানডেমিক ঘোষণা করে যখন একটি রোগের বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়। প্রতিদিনকার আক্রান্তের ঘটনা আগের দিনের চেয়ে বেশি হয়। তবে এর সঙ্গে ঘোষণা করার সময়, ভাইরাসটির ভাইরোলজি বা রোগের তীব্রতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। আর এপিডেমিক বলতে একটি রোগের প্রাদুর্ভাব যখন স্থানীয় পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে হয় ও নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে। এটি রোগের বিস্তার ও হার অনুমানযোগ্য করে তোলে।









মন্তব্য