ডেইলি বাংলা টাইমস :
প্রকাশিত : ২০২৩-০২-১৮ ১৮:৫৪:০৭
ডেইলি বাংলা টাইমস: করোনা মহামারি মানব জীবনের ইতিহাসকে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ফেলেছে। এর ফলে পিছিয়ে গেছে একটা গোটা প্রজন্ম। মহামারি চলাকালীন ২৫ বছরের কম বয়সী তরুণদের ডেটা পর্যালোনা করে এমনটাই জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারি জীবনচক্রের গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে মানব পুঁজি সঞ্চয়কে ব্যাহত করেছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির লক্ষ লক্ষ শিশু এবং যুবক-যুবতীর বিকাশকে লাইনচ্যুত করেছে। এবিষয়ে এখনি পদক্ষেপ নেওয়ার সময় নতুবা দেশগুলি অপূরণীয় ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাবে।
শুধু তাই নয়, গত কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী দরিদ্র বিমোচনের যে প্রক্রিয়া চলে আসছিল তাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এর ফলে ৭ কোটি মানুষ চরম দারিদ্রের দিকে ধাবিত হয়েছে। এমনকি জীবন চক্রের সুপ্ত মানব পুঁজিরও ব্যাপক পতন ঘটিয়েছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা দেবে দরিদ্র দেশগুলোতে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, যদি এর সুরাহা না করা হয়, তাহলে একটি বড় ঝুঁকি থেকেই যাবে। এই বিপত্তিগুলি মানব পুঁজি সঞ্চয়, উপার্জন এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। নিষ্ক্রিয়তার খরচ বেশি এবং কাজ করার সময় কম। সুরাহা না হলে সময়ের সাথে ফাঁক আরও প্রশস্ত হবে।
বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে, করোনার কারণে যে প্রজন্মটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ৯০ শতাংশই ২০৫০ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানে থাকবে। এমতাবস্থায় যদি তাদের জন্য সুষ্ঠ পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে মানব পুঁজি নষ্ট হয়ে যাবে অচিরেই।
মহামারির কারণে স্বাস্থ্য পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে লক্ষ লক্ষ শিশু। বাদ গেছে তাদের প্রয়োজনীয় টিকাদান কর্মসূচী। তারা তাদের যত্নের পরিবেশে আরও বেশি চাপের সম্মুখীন হয়েছিল। বিশেষ করে গৃহস্থ সহিংসতা, পর্যাপ্ত শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বিনোদনের অভাব ইত্যাদি। যার কারণে শিশুদের সামাজিক বিকাশ এবং বিদ্যালয়ের যাওয়ার বিষয়ে ব্যাপক অবনতি দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশের প্রি-স্কুল বয়সের শিশুদের প্রাথমিক ভাষা এবং সাক্ষরতার ৩৪ শতাংশের বেশি এবং গণিত শেখার হার ২৯ শতাংশের বেশি হারিয়েছে।
মহামারির পূর্বে চাকরি করতো এমন ৪ কোটি মানুষ ২০২১ সালের শেষে চাকরি হারিয়েছে। যুব বেকারত্বের প্রবণতা আরও খারাপ হচ্ছে। ২০২১ সালে একাধিক দেশে ২৫ শতাংশ তরুণ শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত ছিল।
এই পরিস্থিতির সুরাহা না হলে সময়ের সাথে ফাঁক আরও প্রশস্ত হবে। কোভিড-সম্পর্কিত শিক্ষাগত ধাক্কার কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির আজকের শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যত গড় বার্ষিক আয়ের ১০ শতাংশ পর্যন্ত হারাতে পারে। বিশ্বব্যাপী, ছাত্রদের এই প্রজন্মের সম্ভাব্য জীবনকালের উপার্জনে ২১ ট্রিলিয়ন ডলার হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।’
এই স্কেলে আজীবন উপার্জনের ক্ষতির অর্থ হতে পারে নিম্ন উত্পাদনশীলতা, বৃহত্তর অসমতা এবং সম্ভবত আগামী কয়েক দশক ধরে সামাজিক অস্থিরতা বজায় থাকতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের মতে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এখনি সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত। এর থেকে পরিত্রাণের কিছু উপায়ও বিশ্বব্যাংক বলে দিয়েছে। তাদের মতে, টিকা এবং পুষ্টি সম্পূরক প্রচারাভিযান; প্যারেন্টিং প্রোগ্রামের কভারেজ বৃদ্ধি; প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, দুর্বল পরিবারগুলির জন্য নগদ স্থানান্তরের কভারেজ বাড়ানো। নির্দেশমূলক সময় বৃদ্ধি; শেখার মূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থীদের শেখার স্তরের সাথে মিলিত নির্দেশনা; এবং মৌলিক শিক্ষার ওপর ফোকাস করার জন্য পাঠ্যক্রমকে স্ট্রিমলাইন করাকে জোর দেওয়অ হয়েছে।
এছাড়াও যুবকদের জন্য অভিযোজিত প্রশিক্ষণ, কাজের মধ্যস্থতা, উদ্যোক্তা প্রোগ্রাম এবং নতুন কর্মী-ভিত্তিক উদ্যোগের জন্য সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদে দেশগুলিকে চটপটে, স্থিতিস্থাপক এবং অভিযোজিত মানব উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ধাক্কাগুলির জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত এবং সাড়া দিতে পারে।