ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৫-১০-০৯ ১৮:৩১:৩৫




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৫-১০-০৯ ১৮:৩১:৩৫




  • আন্তর্জাতিক
  • সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ২০২৫ পেলেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই.

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ২০২৫ পেলেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই

kzqghvva

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ২০২৫ পেলেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই

kzqghvva


সাহিত্যে ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সুইডেনের স্টকহোমে নোবেল কমিটি এ বছরের সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে।

নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে পুরস্কৃত করা হয়েছে “তাঁর সুনিশ্চিত ও দিব্যদৃষ্টিপূর্ণ সাহিত্য সম্ভারের জন্য, যা এই মহাবিপর্যয়ময় আতঙ্কের যুগেও শিল্পের শক্তি ও মানবতার আশাকে জাগ্রত করে।” কমিটির চেয়ারম্যান আন্দার্স ওলসন তাঁকে আখ্যা দিয়েছেন “সমসাময়িক সাহিত্যের অ্যাপোক্যালিপসের মাস্টার” হিসেবে।


১৯৫৪ সালে রোমানিয়ার সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব হাঙ্গেরির জিউলা শহরে জন্ম নেন লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। এই প্রত্যন্ত এলাকার প্রেক্ষাপটেই লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘সাতানটাঙ্গো’ (প্রকাশিত ১৯৮৫ সালে), যা পরবর্তীতে হাঙ্গেরির সাহিত্যে নতুন ধারা তৈরি করে। উপন্যাসে তিনি তুলে ধরেছেন এক পতনোন্মুখ সমাজতান্ত্রিক গ্রামের দরিদ্র মানুষের জীবনসংগ্রাম—অনিশ্চয়তা, প্রতারণা ও বিশ্বাসহীনতার ঘূর্ণিতে হারিয়ে যাওয়া এক সমাজের প্রতিচ্ছবি।


এরপর ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিসট্যান্স’, যা ইংরেজিতে অনূদিত হয় ১৯৯৮ সালে। এই উপন্যাসে পাহাড়ঘেরা কার্পাথিয়ানের এক ছোট শহরে প্রবেশ করে এক রহস্যময় সার্কাসদল—যার মূল আকর্ষণ একটি মৃত তিমি। এই অদ্ভুত ঘটনাই শহরজুড়ে ছড়িয়ে দেয় বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা এবং অরাজকতা। এখানে লেখক দেখিয়েছেন সভ্যতা ও ধ্বংসের দ্বন্দ্ব, যা শেষ পর্যন্ত স্বৈরাচারের জন্ম দেয়।


১৯৯৯ সালে প্রকাশিত তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’—একজন সাধারণ আর্কাইভ কর্মচারীর গল্প, যিনি জীবনের অন্তিম মুহূর্তে নিজের লেখা সংরক্ষণের জন্য নিউইয়র্কে যান। এই উপন্যাসে মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব, অস্থিরতা ও অস্তিত্বের দায় মিশেছে অনন্য বর্ণনাশৈলীতে।


পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত ‘ব্যারন ভেঙ্কহেইম’স হোমকামিং’ (২০১৬) উপন্যাসে দেখা যায়, আর্জেন্টিনায় দীর্ঘ নির্বাসনের পর এক ব্যর্থ অভিজাত ব্যক্তি মাতৃভূমি হাঙ্গেরিতে ফিরে আসছেন হারানো প্রেমের সন্ধানে। তবে এই যাত্রা পরিণত হয় আত্মপ্রবঞ্চনা ও ভ্রান্তির কাহিনিতে।


তাঁর সাম্প্রতিকতম বই ‘হেরস্ট ০৭৭৬৯’ (২০২১, ইংরেজি অনুবাদ ২০২৪)-এর প্রেক্ষাপট পূর্ব জার্মানির থুরিঙ্গিয়ার এক ছোট শহর। এখানে তিনি আধুনিক ইউরোপের বিভক্ত সমাজ, ধর্মীয় অনিশ্চয়তা ও নৈতিক সংকটের মধ্যে মানুষের অসহায়ত্বকে চিত্রিত করেছেন।


ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় মধ্য ইউরোপীয় দার্শনিক ঐতিহ্যের প্রভাব গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। কাফকা ও টমাস বার্নহার্ডের মতো লেখকদের ধারা তিনি নিজের লেখনিতে আধুনিকতাবাদী বুননে মিশিয়েছেন। তাঁর লেখার ধরন দীর্ঘ ও ছন্দময় বাক্যে গঠিত, যা বিশৃঙ্খলার মধ্যেও মানব অস্তিত্বের সৌন্দর্য, ভয় এবং টিকে থাকার আকাঙ্ক্ষাকে ফুটিয়ে তোলে।

নোবেল কমিটি তাঁর সাহিত্যভাষাকে বলেছেন “চিন্তাশীল ও সূক্ষ্মভাবে পরিমিত”—যা একদিকে ধ্বংসের পূর্বাভাস দেয়, আবার অন্যদিকে মানব আত্মার দৃঢ়তাকেও উদ্ভাসিত করে।

২০২৪ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিকা হান কাং। তার পরের বছরই মধ্য ইউরোপীয় সাহিত্যের ধারাকে প্রতিনিধিত্বকারী লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের হাতে উঠল এ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার।









মন্তব্য