ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৫-০৬-১৮ ১৮:১০:৪১




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৫-০৬-১৮ ১৮:১০:৪১




  • জাতীয়
  • ঈদযাত্রার ১২ দিনে সড়কে প্রতিদিন ২৬ জনের মৃত্যু.

ঈদযাত্রার ১২ দিনে সড়কে প্রতিদিন ২৬ জনের মৃত্যু

kzqghvva

ঈদযাত্রার ১২ দিনে সড়কে প্রতিদিন ২৬ জনের মৃত্যু

kzqghvva


ঈদুল আজহার সময় ঘিরে মাত্র ১২ দিনে দেশের সড়ক-মহাসড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৩১২ জন মানুষ। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও এক হাজার ৫৭ জন। প্রতিদিন গড়ে ২৬ জনের প্রাণহানি—এমন মর্মান্তিক চিত্রই উঠে এসেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে।

সংগঠনটি বুধবার (১৮ জুন) সকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ৩ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সারা দেশে সংঘটিত ৩৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়। তথ্য সংগ্রহে তারা ব্যবহার করেছে ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ও নিজস্ব নেটওয়ার্কের তথ্য।

মানবিক ক্ষতির পাশাপাশি বিশাল আর্থিক ক্ষতি

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনাগুলোতে দেশের মানবসম্পদের প্রায় ১ হাজার ২১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কারণ অনেক দুর্ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রাণহানি

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে নারী ছিলেন ৪৭ জন এবং শিশু ৬৩ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়—১০৭ জন, যা মোট প্রাণহানির ৩৪.২৯ শতাংশ। এছাড়া ৪৪ জন পথচারী ও ৫১ জন চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন।

যানবাহনভিত্তিক পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন দুর্ঘটনার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী। বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের বেপরোয়া বাইক চালানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের ব্যবহার এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনের প্রবণতা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ রূপ দিয়েছে।

জাতীয় মহাসড়কে সর্বাধিক দুর্ঘটনা

সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে—১৩৬টি, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৯.১৯ শতাংশ। আঞ্চলিক সড়কে ঘটেছে ১২১টি এবং শহরাঞ্চলে ৫৬টি দুর্ঘটনা।

ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ প্রাণহানি

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি হয়েছে—১১৬টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮৭ জন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে, যেখানে কোনো প্রাণহানির তথ্য পাওয়া যায়নি।

দুর্ভোগময় ঈদযাত্রা

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের আগে ও পরে প্রায় চার কোটি মানুষ যাতায়াত করেছেন, যার মধ্যে ঢাকা থেকেই এক কোটি ৪০ লাখ। গণপরিবহনের ঘাটতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল, অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং চালকদের বিশ্রামের অভাব—সব মিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রা ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক।

ঈদযাত্রায় একাধিক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। ছয়টি ঘটনায় এক পরিবারের সব সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। তিনটি ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী এবং একটি ঘটনায় মা-ছেলে একসঙ্গে মারা গেছেন।

সমাধানে চাই সমন্বিত পরিকল্পনা ও সংস্কার

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মনে করে, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মধ্যমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে রেল ও নৌপথের উন্নয়ন, বিআরটিসির রুট সম্প্রসারণ, ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনের চলাচল বন্ধ, পোশাকশ্রমিকদের ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়া এবং চালকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সংগঠনটি দাবি করেছে, সড়ক পরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থতাই এই প্রাণহানির অন্যতম কারণ। কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলেও সতর্ক করেছে তারা।









মন্তব্য