ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৫-০৩-০৫ ১৭:২৪:১৪




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৫-০৩-০৫ ১৭:২৪:১৪




  • রাজনীতি
  • ট্রাম্পের ২৯ মিলিয়ন ডলারের অজানা কাহিনী.

ট্রাম্পের ২৯ মিলিয়ন ডলারের অজানা কাহিনী

kzqghvva

ট্রাম্পের ২৯ মিলিয়ন ডলারের অজানা কাহিনী

kzqghvva


জাহিদ এফ সরদার সাদী : বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই) জন্য সরকারি তহবিল থেকে ২৯.৯০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) এবং যুক্তরাজ্যের অধুনালুপ্ত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ডিএফআইডি) যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর শক্তিশালীকরণের (স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ এসপিএল) প্রকল্পে এ অর্থ খরচ করা হয়েছিল। 

পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য এ দুটি সংস্থা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেছিল। প্রকল্পের মেয়াদ প্রথমে দুই বছর আর সর্বশেষ এক বছর সাত মাস বাড়ানো হলেও ডিএফআইডি অর্থায়ন প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে। তবে বাংলাদেশে ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে সরাসরি ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ছিল ইউএসএআইডি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর এই অর্থায়ন বাতিলের বিষয়টি এবং প্রকল্পের অর্থায়ন প্রসঙ্গে আমার নিজ চোখে দেখা আর প্রতিবাদের এক রহস্যময় কাহিনী আজ বলতে হচ্ছে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করতে। 

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রকল্পটি শুরুই হয়েছিল ২০১৭ সালে। ২০১৭ সালের মার্চে চুক্তি সইয়ের পর এসপিএল প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয় মার্চে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মাধ্যমে ২৯ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার জন্য চুক্তি হয়েছিল। ইউএসএইডের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এ প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ৮ বছর ৭ মাস নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পটি যেহেতু মার্কিন করদাতাদের অর্থে পরিচালিত, তাই এর অর্থায়ন বিষয়ক তথ্যগুলোও জনসমক্ষে প্রকাশিত। এসব তথ্য কোনো গোপন দলিল নয়। তাছাড়া বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোনো দেশীয় বেসরকারি সাহায্য সংস্থার জন্য উন্নয়ন সহায়তা বা অনুদান আসেনি। ফলে তা এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মাধ্যমে ছাড়ের সুযোগ নেই।

প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল, রাজনৈতিক সহিংসতা হ্রাস করার পাশাপাশি দলের সক্ষমতা তৈরি এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের জন্য কাজ করবে। এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারী, যুবক এবং তৃণমূল কর্মীদের যুক্ততার স্বার্থে বাংলাদেশের সাতটি বিভাগে দফতর পরিচালনা করে। এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র কাঠামোর উন্নয়ন, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্বের বিকাশে উৎসাহদান। এ প্রকল্পে রাজনৈতিক সহিংসতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহিংসতার ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে এর শান্তিপূর্ণ বিকল্পের প্রচারে রাজনৈতিক দল, তৃণমূল কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা ছিলো। প্রকল্পের অন্যতম কর্মসূচি হিসেবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের ৪০টি জেলায় ‘শান্তিতে বিজয়’ শীর্ষক প্রচার কর্মসূচি চালানো হয়েছিলো।


প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের একটি জরিপ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। সে বছরের অক্টোবরে ইন হাউস কম্পিউটার অ্যাসিসট্যান্স টেলিফোন সার্ভে সিস্টেমের মাধ্যমে এক সপ্তাহে প্রায় দেড় হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। জরিপে বলা হয়েছিল, এখন (জরিপ চলাকালে) ভোট হলে ৩৮ শতাংশ মানুষ ভোট দেবে আওয়ামী লীগকে। আর ৫ শতাংশ ভোট দেবে বিএনপিকে। যদিও জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩৫ শতাংশ ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দলেরই নাম নেয়নি।

জরিপ প্রকাশের ছয় মাস আগে ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং তখনকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্লেন কোয়েনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছিল। বাংলাদেশ সফরের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন তারা। শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় গ্লেন কোয়েন আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কাজের প্রশংসা করেন।

২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গ্লেন কোয়েন জরিপ তুলে ধরেন ওয়াশিংটনে। উড্রো উইলসন সেন্টারে এক প্যানেল আলোচনায় আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের করা জরিপের ফলাফল নিয়েও পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে ছিলেন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের তৎকালীন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়ার গবেষণা ফেলো লিসা কার্টিস। লক্ষ্য ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে নীতি গ্রহণে প্রভাবিত করা।

তখন দেশে রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অর্থবহ সুযোগ ছিলো না। বেড়েছিলো উগ্রবাদী সন্ত্রাস। জঙ্গিবাদ দমনে সরকার সফল বলে মনে করেছিলো অধিকাংশ মানুষ। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিবেশ, ধর্মান্ধতা ও উগ্রবাদ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে পরিচালিত ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের ঐ জরিপের পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলা হয়েছিল। সেদিন ওয়াশিংটনে উড্রো উইলসন সেন্টারে প্যানেল আলোচনার প্রতিবাদ করেছিলাম আমি জাহিদ এফ সরদার সাদী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সায়েম। 

আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) জরিপের উপর ভিত্তি করে ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং তখনকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্লেন কোয়েনের বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার বাস্তবসম্মত কোনো ভিত্তি নেই বলে প্রতিবাদ করেছিলাম আমরা। দিনটির কথা মনে থাকবে আমার সারাজীবন। বারংবার প্রশ্ন করতে চেয়েও প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না ব্যারিস্টার সায়েম। তিনি যেহেতু প্রশ্ন করতে চাচ্ছিলেন তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে, আমি তাই হাত উঠিয়ে তাকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইনি। কিন্তু বুঝতে পারলাম, ওরা আমাদের প্রশ্ন করতে দিয়ে অপ্রস্তুত হতে চাচ্ছিলো না। তবে যখন দেখলাম আর কোন উপায় নেই, ওদেরকে ধরতে হবে, আমি তখন হাত তুলে বসে থাকলাম। ভাগ্যক্রমে আমি সুযোগ পেলে একবারের জন্যও চিন্তা না করে মাইকটি ব্যারিস্টার সায়েমকে দিয়ে বললাম, তিনি আমার আগে থেকেই কথা বলতে চেয়েছেন। ব্যারিস্টার সায়েম তাদের বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার কঠোর ভাষায় সমালোচনা ও প্রতিবাদ করলেন। আমিও তাতে যোগ দিলাম। মার্কিন কংগ্রেসের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে তুলে ধরব বলে আমরা হুঁশিয়ারি দিলাম। 

পরবর্তীতে আমরা তৎকালীন মার্কিন কংগ্রেসের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির এশিয়া প্যাসিফিকের চেয়ারম্যান টেড ইয়োহোসহ ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের সহপ্রতিষ্ঠাতা গ্লেন কোয়েনের সাথে বৈঠকে মিলিত হই। যেহেতু মার্কিন কংগ্রেস বৈদেশিক অনুদান অনুমোদন করে, তাই কংগ্রেসম্যান টেড ইয়োহোকে অবহিত করে এ বিষয়ে কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ কামনা করি ব্যারিস্টার সায়েম ও আমি। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান টেড ইয়াহু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি এবং কংগ্রেসে শুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এর মাঝে পার হয়ে গেছে আটটি বছর। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে আর এখন বাতিল করা হয়েছে হাসিনাকে গদিতে টিকিয়ে রাখার ২৯ মিলিয়ন ডলারের সে গ্রান্ট।


যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের সার্ভেতে শেখ হাসিনার এপ্রুভাল রেটিং ছিল ৭০%। এই সার্ভে ব্যাপকভাবে প্রচার করছিল আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন এবং আওয়ামী লীগ। এখন আওয়ামী সুশীল আর কট্টর হাসিনাপন্থীদের দাবি ডিআই আর সিআরআই নাকি হাসিনার খুনি সরকারকে ফেলে দিয়েছে। এই সেলফ-ডিনায়্যাল খুব ইন্টারেস্টিং। হাসিনার কট্টর সমর্থক ও আওয়ামী লীগের সুশীলরা হাসিনা আমলের গুম, খুনকে তাদের সরকার পড়ে যাওয়ার মতো বড় কোনো কারণ মনে করেন না। মনে করেন না, বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ রাস্তায় নেমে এসেছিল মুজিবের মেয়ে, অত্যাচারী, খুনি ও চোর হাসিনাকে উৎখাত করার জন্য। ১৫-১৬ বছরের সন্তানদের বাবা-মা বাসায় আটকে রাখতে পারেনি। এরা  চিঠি লিখে বাসা থেকে চলে গিয়েছিলো মিছিলে যাবে বলে। তবে অত্যন্ত আশার কথা, আওয়ামী লীগের এই সেলফ-ডিনায়্যাল গ্রুপটার বয়স ৩৭-৩৮ বছরের বেশি। জেন-জি যারা এই আন্দোলনের মূল শক্তি, তাদের কাছে ডিআই, সিআরআই আর ২৯ মিলিয়ন ডলার ম্যাটার করেনি। তাদের কাছে ম্যাটার করেছিল মুজিবের অপদার্থ ও  মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ের ঔদ্ধত্য। যে খুনের পর খুন আর গুমের পর গুম করে মিহি কান্না কান্না স্বরে বলতো “আমার কি দোষ? আমি কিন্তু সেন্টমার্টিন দেইনি।”

আর হ্যাঁ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশে দুই জনের একটি সংস্থা পেয়েছেন যারা ২৯ মিলিয়ন ডলারের অনুদান পেয়েছিলো। সে সংস্থাটি হলো ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) আর তার দুই প্রতিষ্ঠাতার একজন হলেন গ্লেন কোয়েন, অন্যজন ইরিক বিয়রকলুন্ড।

লেখক : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা










মন্তব্য