ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-০১-১৩ ১৬:০০:০০




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-০১-১৩ ১৬:০০:০০




  • জাতীয়
  • ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাসে গড়ে ৪টি মামলা করে সরকারি লোকজন: সিজিএস.

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাসে গড়ে ৪টি মামলা করে সরকারি লোকজন: সিজিএস

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাসে গড়ে ৪টি মামলা করে সরকারি লোকজন: সিজিএস


ডেইল বাংলা টাইমস:

মতপ্রকাশে ভয়ের আবহ প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। গত চার বছরে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এই আইন নিয়ে গবেষণা করে দেখেছে, প্রতি মাসে সরকারি লোকজন গড়ে চারটি করে মামলা করছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। যার প্রধান লক্ষ্য ছিল মতপ্রকাশে ভয় প্রতিষ্ঠা করা। সিজিএসের গবেষণা বলছে- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সবচেয়ে বেশি আসামি রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকরা।  শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ‘কী ঘটছে: বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ব্যবহারপ্রবণতা ও নিদর্শন’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আলোচকেরা এসব তথ্য তুলে ধরেন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।  ওয়েবিনারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা, অভিযুক্ত, আটক ও আটক ব্যক্তিদের পরিচয় ও মামলাকারীদের পরিচয়সংক্রান্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ডিস্টিঙ্গুইশড অধ্যাপক ও সিজিএসের উপদেষ্টা আলী রীয়াজ।  তিনি বলেন, ভীতির পরিবেশ তৈরি করাই ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেন সবাই সার্বক্ষণিক আতঙ্কে থাকেন, প্রতিবাদ না করেন।  ওয়েবিনারে আলোচকেরা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই আইনে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। প্রয়োজনে ১৫ দিন সময় বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ৭৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে না। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিচারের আগেই দীর্ঘদিন আটক থাকেন। গত ৪ বছরে ১৮ বছরের কম বয়সী অন্তত ২৬ কিশোর এই আইনে অভিযুক্ত হয়েছে।  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন ৪ বছরে ১ হাজার ১০৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে বলে ওয়েবিনারে জানানো হয়। এসব মামলায় অভিযুক্ত ২ হাজার ৮৮৯ জন। এর মধ্যে আটক হয়েছেন ১ হাজার ১১৯ জন, অর্থাৎ মোট অভিযুক্ত মানুষের ৩৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ আটক হয়েছে। তবে এই তথ্য মামলার পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মামলার তথ্য প্রকাশ করতে চায় না।  ওয়েবিনারে জানানো হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলায় ১ হাজার ২৯ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় জানা গেছে। এর মধ্যে ৩০১ জন রাজনীতিবিদ। সাংবাদিক রয়েছেন ২৮০ জন। শিক্ষার্থী ১০৬ জন এবং শিক্ষক আছেন ৫১ জন। তবে অভিযুক্ত অন্যদের চেয়ে শিক্ষার্থীদের আটকের হার বেশি। মোট অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭১ শতাংশই আটক হয়েছে।  ওয়েবিনারে আরও জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ১৪০টি। এসব মামলায় অভিযুক্ত ২১০ জন, এর মধ্যে আটক হয়েছেন ১১৫ জন। রাজনীতিবিদদের মানহানির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলার অধিকাংশ বাদী তাঁদের সমর্থকেরা।  আলোচকেরা বলেন, ফেসবুকে জনগণের কণ্ঠস্বর নীরব করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হয়েছে। মাসে গড়ে ৯টি মামলা হয়েছে ফেসবুকে মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে। মোট ৬৯৮টি মামলা হয়েছে ফেসবুককেন্দ্রিক। এর মধ্যে হয়রানির মামলা ৭৬টি, আর্থিক প্রতারণা ৪৪টি এবং ধর্মীয় অবমাননার ১১৫টি মামলা। বাকি ৪৬৩টি রাজনৈতিক মামলা বলেই প্রতীয়মান হয়।  আলোচকেরা বলেন, সাংবাদিকদের জন্য খড়্গ হয়ে এসেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। বিশেষ করে আঞ্চলিক সাংবাদিকেরা বেশি ঝুঁকিতে। ২০২০ সালে এই আইনের অধীন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে। প্রতি মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের লোকজন গড়ে চারটি করে মামলা করেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এই আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলা বেশি হয়েছে। ২৫ ও ৩১ ধারা দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আদালতও প্রশ্ন তুলেছিলেন।  ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও বাক্‌স্বাধীনতার সংকট রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যে ভয়ের আবহ, তা আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। অধিকাংশ মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকছেন।  সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ভয় সৃষ্টিতে সফল হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। রাজনৈতিকভাবে যাঁরা শক্তিশালী, তাঁদের বিরুদ্ধে এই আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না।  আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন- গ্লোবাল টিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব লর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাইমুম তালুকদার, সাংবাদিক মাসুদ কামাল, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এলিনা খান।









মন্তব্য