ডেইলি বাংলা টাইমস :
প্রকাশিত : ২০২৪-১১-০৬ ১৭:৫৯:৩৭
চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী লেইনে ফেসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা-এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় সনাতন ধর্মবিশ্বাসী সংগঠন ‘আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ- ইসকন’ জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) মুখপাত্র উপ-কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনের তথ্যমতে, হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এরা হলেন- নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারি কমিশনার মাহফুজুর রহমান এবং পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলাম, বিপ্লব বেপারি, আবু সায়েম সেজান, সাইদ হাসান, ফয়েজ, নাইম, আশিকুর ও শাহজাহান হোসেন শাওন। এরমধ্যে ফয়েজ এসিডদগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
উপ পুলিশ কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারা জয় শ্রীরাম বলে স্লোগান দিয়েছে। আর তদন্ত ও গোয়েন্দা তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছি, এ ঘটনায় ইসকন সমর্থকরাই জড়িত। ইসকনকে নিয়ে দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ওসমান আলী নামে এক ব্যক্তিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে— এমন তথ্য ৯৯৯-এ পেয়ে আমাদের কোতোয়ালী থানা পুলিশ রেসপন্স করে। তারা সেখানে গেলে অবরুদ্ধ ওসমানকে উশৃঙ্খল জনতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।’
‘পরিস্থিতির অবনতি হলে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ এবং সেনাসদস্যরাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়। ছিনিয়ে নেওয়ায় বাধা দেওয়ায় উশৃঙ্খল জনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল ও এসিড নিক্ষেপ শুরু করে। এতে আমাদের ৯ জন সদস্য আহত হয়, যার মধ্যে একজন এসিডদগ্ধ হয়েছেন।’
হামলার ঘটনায় ৮২ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে যেহেতু বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল। তবে যাচাই বাছাই করে আমরা ৮২ জনকে রেখেছি। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ইসকন সমর্থক। কয়েকজন মুসলিম থাকতে পারে। এটিও যাচাই-বাছাই চলছে।’
হাজারী লেইনে ওষুধের পাইকারি দোকান সিলগালা করায় রোগীরা ভোগান্তিতে পড়বে কি না জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা আমাদের নেই। নিরাপত্তার স্বার্থে, যেন সেখানে কোনো নাশকতা বা লুটতরাজ না হয় এজন্য কয়েকটি দোকান জেলা প্রশাসন সিলগালা করে সাময়িক বন্ধ করেছে। কিন্তু সব দোকান বন্ধ করা হয়নি।’
হামলাকারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে রইছ উদ্দিন বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক মদদ রয়েছে কি না সেটা তদন্ত করা হচ্ছে। আটক করা হয়েছে যাদের, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শান্ত নগরীকে যারা বিশৃঙ্খল করতে চায়, তাদের বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান।’
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সম্ভাবনা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো ছোট-খাটো ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা তৎপর আছি। এ ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’
ফেসবুকে ‘বিতর্কিত’ পোস্ট দেওয়া যুবককে আটক করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওসমান আলী বর্তমানে কাস্টডিতে আছে। যদি এখানে কেউ ধর্মীয়ভাবে সংক্ষুব্ধ হয়েছে, এমন অভিযোগ ওসমান আলীর বিরুদ্ধে নিয়ে আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় নগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় ৮২ জনের নাম উল্লেখসহ ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের করেছেন কোতোয়ালি থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) মিজানুর রহমান।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ সারাবাংলাকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।