ডেইলি বাংলা টাইমস :
প্রকাশিত : ২০২৪-০৭-৩১ ০১:০৬:১৯
মুখে লাল কাপড় বেঁধে রাবিতে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশ: দেশব্যাপী ছাত্র হত্যা, নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনায় ও সরকার ঘোষিত রাষ্ট্রীয় শোক প্রকাশের ঘটনাকে প্রত্যাখ্যান করে লাল কাপড় মুখে বেঁধে প্রতিবাদ র্যালি ও সংহতি সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকবৃন্দ।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে থেকে র্যালি বের করেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হোন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইফতেখারুল আলম মাসউদ এর সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালেহ হাসান নকীব বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে ভয়ংকর এক জায়গায় নিয়ে গেছে সরকার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যেভাবে মোকাবিলা করার প্রয়োজন সেভাবে করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এখনও আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হয়রানি ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে এবং ডিবি কার্যালয়ে বসিয়ে বিবৃতি দেওয়ানোসহ সব ধরনের নোংরা পন্থা অবলম্বন করেছে সরকার। আমরা এগুলোর অবসান চাই এবং নির্বিচারে যেসব হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করে দোষীদের বিচার চাই। এছাড়াও দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার আহবান জানান তিনি।
ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের রক্তে আজ রঞ্জিত। সারাদেশে শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ জনতার ওপর যেভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে সরকার তা সবাই দেখেছে। এমন নৃশংস হত্যাকান্ড শুধু শিক্ষকদের নয়, সারা বিশ্বের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। ফলে সরকার ঘোষিত শোককে প্রত্যাখ্যান করে লাল কাপড় মুখে বেঁধে আমরা প্রতিবাদ করছি। আশা করছি সরকার জনগণের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। ছাত্রদের আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝে অতিদ্রুতই সারাদেশে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যাল খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিবে।
ভেটেরিনারি এন্ড এলিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসা. ইসমাত আরা বেগম বলেন, আমিও দুই সন্তানের মা। আমি সেই মায়েদের কথাই ভাবছি যাদের সন্তানরা তাজা রক্ত দিয়ে বলে গেল 'আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় করে ছাড়ব' এবং যাদেরকে ধরে নিয়ে গেছে তাদের অনেক পিটিয়েছেন। তাদের মা-বাবারা আবার সেই চিত্র টিভিতে দেখছেন। যা আমরা সহ্য করতে পারছি না। তাহলে পিতামাতা কিভাবে সহ্য করছে? পুলিশ সেনাবাহিনী ও বিজিবির প্রতি আমার আহবান, আমাদের মাসুম সন্তানদের গায়ে আর গুলি করবেন না, প্লিজ! তারা কোন খারাপ কাজ করেনি। শুধু অধিকার আদায়ের জন্য দাবি করেছিল। আর এটা যদি পাপ হয়- তাহলে সারা দেশের সকল শিক্ষার্থী পাপ করছে। আপনারা সবাইকে শেষ করে ফেলেন। বাংলাদেশে কেন সন্তানের দরকার নেই আমাদের। কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পড়াশুনার দরকার নেই। আমরা এমন দেশ চাই না বরং আমরা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। যে বাংলাদেশে আর কোন অন্যায়, অবিচার, নৃশংসতা হবে না
খুলনার শিববাড়ি মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত-বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) নগরের শিববাড়ি মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, ৯ দফা দাবিতে আজ শিববাড়ি মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন খুলনার শিক্ষার্থীরা। ওই ঘোষণার পর শিববাড়ি মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল থেকেই শিববাড়ি মোড় ও এর আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন। তবে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে একটি বড় মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শিববাড়ি মোড়ে আসেন। সেখানে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরে তারা ওই মোড়ের চারটি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম বলেন, বেলা দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি শেষ করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি শেষ হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এর আগেও শিক্ষার্থীরা নগরের নতুন রাস্তা মোড়, শিববাড়ি মোড় ও জিরোপয়েন্ট এলাকায় অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কেএমপির চারটি থানায় চারটি নাশকতার মামলা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও আসামি করা হয়েছে ২০০ থেকে ৪০০ জনকে। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত ১০৭ জনকে গ্রেফতারকরেছে পুলিশ। তাদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
কিশোরগঞ্জে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত-বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে মাথায় লাল কাপড় বেধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে শহরের পুরাতন থানা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে রেল স্টেশনের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ মিলিত হয়।
জানা গেছে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে রেল স্টেশনের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ মিলিত হয়। পরে রেল স্টেশন এলাকায় ৯ দফা দাবিতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে বেধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনরত শিক্ষার্থী। ঘণ্টাব্যাপী এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে শিক্ষার্থীরা মাথায় লাল কাপড় বেধে অংশ নেয়।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অভি চৌধুরী, ইকরাম হোসেন, এনামুল হক নাঈম, আফসানা ইসলাম প্রমুখসহ কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।