ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-১০-২২ ০১:২২:২০




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-১০-২২ ০১:২২:২০




  • রাজনীতি
  • বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশ কর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন : রিজভী.

বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশ কর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন : রিজভী

বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশ কর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন : রিজভী


বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছি- কীভাবে বিএনপির কর্মসূচিকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা যায় সেজন্যই বৈঠক করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের হিড়িক থামছে না, আরও জোরদার করা হয়েছে। সুতরাং এটি অত্যন্ত সুষ্পষ্ট, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন দলবাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না আসতে কী পরিমাণ নৃশংসতা চালাবে তারই ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে, আবারও ভোটের আগের রাত্রে নৌকা মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলতে তারা সর্বোচ্চ রক্তাক্ত সহিংসতায় লিপ্ত থাকবে। ইতোমধ্যেই দলবাজ প্রশাসনের মনোরঞ্জনের জন্য জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের উৎকোচ দেওয়া শুরু হয়েছে।

শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী জানান, আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের জন্য অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ডা. সিরাজুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে ডিসি ও ইউএনওদের ২৬১টি বিলাস বহুল গাড়ি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল) কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ডলার সংকট ও প্রচণ্ড রিজার্ভ ঘাটতির মধ্যে গাড়ি কেনার উদ্যোগ শেখ হাসিনার অধীনে একতরফা নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করার এক মোক্ষম ঘুষ হিসেবে দেখছে জনগণ।

তিনি বলেন, একটি দেশের সরকারি কর্মচারীদের স্বরূপ দেখলেই সেই রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য বোঝা যায়। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রশাসনের নির্লজ্জ দলবাজ কর্মকর্তাদের ভূমিকাতেই সুষ্পষ্ট হয়, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের মাত্রা কত ভয়াবহ। আওয়ামী নেতারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন গণতন্ত্রকামী মানুষদের বিরুদ্ধে। এদের কেউ কেউ বলেছেন- কর্মসূচির নামে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর বিএনপি কি সহিংসতা করেছিল? এর কি কোনো প্রমাণ আছে? তাহলে কেনো বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রক্তাক্ত প্রান্তর বানিয়েছেন? কেন ওইদিন দারুস সালাম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করলেন? কার্যালয়ে হানা দিয়ে ৪৭০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করলেন? আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ওয়ারী থানা যুুবদল নেতা ফয়সল মেহবুব মিজুর পিতা মিল্লাত হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করে? এই হত্যার জন্য কি আপনারা দায়ী নন?

রিজভী বলেন, জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে শেখ হাসিনার মোসাহেবি করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর মেজর থেকে শুরু করে ছাত্র-যুবক-শ্রমিক-সাধারণ মানুষকে যেভাবে হত্যা, নির্যাতন এবং হয়রানি করে যাচ্ছেন তা মানবতার বিরুদ্ধে এক জঘন্যতম অপরাধ। শেখ হাসিনা আপনাদের কত টাকার সম্পদ বানিয়ে দিয়েছেন, একটা অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য সারা দেশের জনপদের পর জনপদে রক্ত ঝরাচ্ছেন, আর লাশের তালিকা দীর্ঘ করছেন? তবে আপনাদের বলে রাখি- এবার জনগণ আর হারবে না। যারা জনগণ প্রদত্ত খাজনার টাকায় বেতন এবং অস্ত্র নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন তারা প্রতি মুহূর্তে জনগণের কাছে কালো তালিকাভুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার কাছে প্রজা হয়ে থাকবে না। জনগণ এবার তার মালিকানা ছিনিয়ে নিবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১৯ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাজি আবু নাঈম মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে এজাহার দিয়ে ৩০ জন এবং অজ্ঞাত আরও অনেক বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে কদমতলি থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে শ্যামপুর থানায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ করে। অথচ এজাহারে উল্লিখিত তারিখ, স্থান ও সময়ে আওয়ামী লীগের কোনো সমাবেশই হয়নি।

রিজভী বলেন, ‘স্বঘোষিত জনদরদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য সাঙ্গ-পাঙ্গরা বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের সরাসরি হত্যার হুমকি দিচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে সরাসরি বলেছেন ‘ডান্ডা মেরে ঠান্ডা’ করব না, মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে দিয়ে ঠান্ডা করে দিব।’ আরেকজন মন্ত্রী বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন—‘কেউ হুমকি দিলে কী করতে হবে আওয়ামী লীগ সেটা জানে’। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, শেখ হাসিনা নিজেই প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দেন। সুতরাং এতে উৎসাহিত হয়ে মন্ত্রী ও নেতারা একযোগে সর্বনাশা সহিংসতা আর হত্যার হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের এও মনে আছে, শেখ হাসিনা গত বছর বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেছেন, টুস করে তাকে পদ্মা নদীতে ফেলে দিবেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির কর্মসূচির পূর্বে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে হাত তোলা হবে তা ভেঙে ফেলতে হবে।’ অসুস্থতায় মুমূর্ষু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আহবানের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী সকল মানবতা, মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে বিলাপ করে বলেছেন ‘তার বয়স তো আশি’র উপরে। সময় হয়ে গেছে। এই সর্বনাশা বক্তব্য দেশনেত্রীকে উন্নত চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়ার সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত।

তিনি বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ উপলক্ষে বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা ও জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নেতা—মন্ত্রীরা বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে নানামুখী হুমকি এবং বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হত্যার তাদের যে ঐতিহ্য রয়েছে সেটিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য। তাদের পরাক্রমশালী গুণ্ডা ও খুনিদের অতীতের খুন—জখমের কীর্তি বারবার দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একদিকে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতারা সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন, অন্যদিকে তারা দিচ্ছেন সহিংসতার হুমকি। বিএনপির কর্মসূচি মোকাবিলার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তারা আওয়াজ তুলছেন। এই সমস্ত হুমকি কি সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্ব লক্ষণ? পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার সুরে সুর মিলিয়ে বলছেন- ২৮ অক্টোবর সহিংতা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। বিএনপির সমাবেশের আগেই পুলিশের এই হুঁশিয়ারি আবারও প্রমাণ করল- শেখ হাসিনার হাতে লালিত পালিত পুলিশ বাহিনী গণতন্ত্র, সুশাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন তথা জনগণের বিপজ্জনক প্রতিপক্ষ।









মন্তব্য