ডেইলি বাংলা টাইমস :
প্রকাশিত : ২০২৫-০৬-০৭ ১৪:৩৯:২৪
আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। স্রষ্টার উদ্দেশে পশু কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে সারাদেশ দিনটি উদযাপন করবেন মুসলমানরা।ঈদুল আজহার প্রধান উৎসব পশু কোরবানি। ঈদের নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যার শুরু হয়ে যায়। শনিবার (০৭ জুন) সকাল ৮টার পর নগরের অলিগলিতে দেখা মিলল সেই দৃশ্যের। চারপাশে গরুর ডাক। কোরবানির পশু জবাইকে কেন্দ্র করে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইট পাথরে ঘেরা নগরবাসীরা। শিশুদের চোখে দেখা মিলছে কৌতুহলের। দেখে বুঝা যায় ঢাকাবাসীর এক ভিন্ন আনন্দ ও উৎসব।
রাস্তাই যেন ঈদের মাঠ
ধানমন্ডির বাসিন্দা আসিফ আলী বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কসাইয়ের অপেক্ষায়। কাসাইকে রেখে ঈদের নামাজ আদায় করতে যাবেন। তার সাত বছর বয়সী ছেলে রাকিব লাফিয়ে লাফিয়ে বাবার সঙ্গে গরু ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আবার যেয়ে গরুকে আদরও করছে। এমন দৃশ্য শুরু ধানমন্ডির নয়। সারা ঢাকার সব এলাকাতে একই রকম দৃশ্য চোখে পড়ে। শিশুরা গরুর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে, কেউ কেউ ভয় পেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকলেও চোখ সরাতে পারছে না।
পারিবারিক মিলনমেলাই ঈদের প্রকৃত আনন্দ
কোরবানি পশু জবাই করলে আনন্দ শেষ হয় বিষয়টি এমন নয়। এ দিনটি পরিণত হয় এক পারিবারিক মিলনমেলায়। সব পারিবারিক বিভেদ ভুলে মাংস কাটা, গোশত ভাগ করা, রান্না এবং বিতরণ সব কিছুতেই পরিবার-প্রতিবেশীরা মিলে কাজ করেন।
ঝিগাতলার গৃহবধূ মিম বলেন, ‘সারা বছর কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না, কিন্তু ঈদের দিন সবাই যেন একাত্ম হয়ে যায়। এটিই কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা।’
ত্যাগের মহিমায় মানবিকতা
কোরবানির মাংসে হক তথা অধিকার থাকে তিন শ্রেণির মানুষের। এতে একা হক আদায় করা যায় না। মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ গরিবদের জন্য নির্ধারিত থাকলেও অনেক পরিবার অর্ধেক বা তারও বেশি অংশ দান করছেন।
হাজারীবাগের ট্যানারি মোড়ে সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়, একটি পরিবার পাঁচটি গরু কোরবানি দিয়ে তার অধিকাংশ মাংস আশপাশের অসহায় মানুষদের মধ্যে বিতরণ করছেন।
এদিকে সঠিক দোয়া ও কালাম পড়ে পশু জবাই করে দিতে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্ররা। এর মধ্যে রাকিব নামের এক ছাত্র বলেন, আমরা মূলত স্বেচ্ছাসেবী হয়ে মাঠে নেমেছি। সঠিকভাবে দোয়া না পড়ে বা সঠিক নিয়মে পশু জবাই না করা হলে এ কোরবানি হালাল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এজন্য যারা আমাদের ডাকছেন আমরা তাদের পশুটি জবাই করে দিয়ে আসছি।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও মাঠে নেমেছে। কয়েকটি যুব সংগঠন রাস্তাঘাট পরিষ্কারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘ঈদের আনন্দ তখনই পূর্ণ হয়, যখন চারপাশও পরিচ্ছন্ন থাকে।’
সামাজিক সংহতির প্রতিচ্ছবি
এই দিনটি যেন সাম্য, সহানুভূতি ও অংশগ্রহণের এক উৎসব। গরুর দাম যাই হোক না কেন, এক টুকরো গোশত যখন দরিদ্র মানুষের হাতে পৌঁছে, তখনই কোরবানির তাৎপর্য পূর্ণতা পায়।
ঈদুল আজহার পশু কোরবানির আড়ালে যে ভালোবাসা, ত্যাগ আর সামাজিক ঐক্যের চিত্র ফুটে ওঠে তা শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং একটি মানবিক সংস্কৃতি। ঢাকাবাসীর জন্য এই দিনটি তাই শুধুই রক্ত আর গোশতের দিন নয়, বরং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, হাসিমুখে ভাগাভাগির, এবং একসঙ্গে বেঁচে থাকার এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
