ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-১১-১৩ ১১:১৭:২০




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-১১-১৩ ১১:১৭:২০




  • আইন-আদালত
  • মরে গিয়েও আসামি আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া.

মরে গিয়েও আসামি আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া

মরে গিয়েও আসামি আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া


সানাউল্লাহ মিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এ আইনজীবীর কথা মনে আছে কি? মারা গেছেন সেই ২০২০ সালের ২৭ মার্চ। মৃত্যুর কয়েক বছর পরও মামলা থেকে যেন তাঁর নিস্তার নেই। ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘাতের ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর রামপুরা থানায় করা এক মামলার ২২৬ নম্বর আসামি তিনি।

শুধু সানাউল্লাহ মিয়া নন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ২৩ নম্বর ওয়ার্ড সহসভাপতি নাসির রহমান একই মামলার ৮৮ নম্বর আসামি। অবাক করা বিষয় হলো– গত বছরের অক্টোবরে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। সেই মামলারই ১২ নম্বর আসামি মির্জা আকবর ইমাম ভুলু। তিনি ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। বছর দেড়েক শয্যাশায়ী এ নেতা কমিটিতেও নেই, রাজপথেও নেই। তবু তিনি মামলার চক্করে। 

বিএনপি নেতারা বলছেন, সারাদেশে নেতাকর্মীর নামে এমন ‘গায়েবি’ মামলা হচ্ছে। মৃত, বিদেশে এবং কারাগারে থাকা নেতাকর্মীকে করা হচ্ছে আসামি। সব মামলার এজাহারে একই রকম শব্দের গাঁথুনি। কোনোটির বাদী পুলিশ, আবার কোনোটির বাদী স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা।  

রামপুরা থানার ওই মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে কাকরাইল ও নয়াপল্টন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এক থেকে দেড় হাজার নেতাকর্মী রামপুরা-মালিবাগ এলাকায় পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ করতে করতে মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসেন। এ সময় তারা অগ্নিসংযোগ, ইটপাটকেল নিক্ষেপও করেন। অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে হামলা করেন। 

এ ঘটনায় পরদিন বাদী হয়ে রামপুরা থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক আব্দুল জলিল। মামলায় ২৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। ২২৬ নম্বর আসামি প্রয়াত অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার বড় ছেলে আইন পেশায় নিযুক্ত সফিকুর রহমান রানা  জানান, গায়েবি মামলায় ত্রুটি থাকবেই। সত্য ঘটনা হলে এ ধরনের ভুল হতো না। তাঁর বাবা মারা গেছেন আজ প্রায় চার বছর হতে চলেছে। তিনিও নাকি ককটেল মেরেছেন! ২০১৮ সালেও এমন গায়েবি মামলা হয়েছিল। রামপুরা থানাতেই এ রকম একটি মামলায় বাবাকে তখন আসামি করা হয়। এখন সেই তালিকা কপি-পেস্ট করে নতুন মামলা দেওয়া হয়েছে। 

ওই মামলার আরেক আসামি নাসির রহমানের স্ত্রী রিনা রহমান বলেন, নাসির রহমান লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে ১৩ মাস আগে মারা গেছেন। তিনি বিএনপির রাজনীতি করতেন। একজন মৃত মানুষকে যদি আসামি করা হয়, মামলায় দেওয়া হয় তাহলে কী করার আছে? যারা এসব মিথ্যা ও ভুয়া মামলা দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। 

মামলার বাদী পুলিশের উপপরিদর্শক আব্দুল জলিল জানান, ঘটনার সময় উপস্থিত জনতা, বিভিন্ন সোর্স থেকে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের আসামি করা হয়েছে। এখন তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে না, যারা মারা গেছেন, ঘটনার সময়ে কারাগারে ছিলেন তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রী চম্পক চক্রবর্তী বলেন, ভুলবশত মামলার এজাহারে নাসিরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তা সংশোধনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা মামলায় ঘটনা আর বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এরপরও শুধু রাজনৈতিক হয়রানি করতে এসব মামলা দেওয়া হচ্ছে। 

একইভাবে যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুস সোবহান ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর কয়েক বছর পর তাঁর নামে মামলা হয়েছে! এ ছাড়া জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম দুই বছরের বেশি সময় কারাবাসের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। তিনি জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। 

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় জামায়াতের ৮৮ নেতাকর্মী এবং অজ্ঞাত ৭০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রগতি সরণির জামালপুর টাওয়ারের সামানে ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়। সম্প্রতি জামায়াতের এক নেতা জামিন পাওয়ার পর এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এরপর পুলিশের করা এ মামলা সম্পর্কে জানা যায়। মামলায় ১৫ নম্বর আসামি সাবেক এমপি শামসুল ইসলাম এবং ১৬ নম্বর আসামি আবদুস সোবহান।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে আবদুস সোবহান গ্রেপ্তার হন। এরপর যুদ্ধাপরাধের মামলায় পাবনা-৫ আসনের সাবেক এ এমপিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। আপিল চলা অবস্থায় তিনি মারা যান। টানা আট বছর কারাগারে থাকা প্রয়াত ব্যক্তি কী করে মৃত্যুর তিন বছর পর আসামি হলেন– প্রশ্নে জামায়াত নেতাদের দাবি, মামলাটি গায়েবি।

চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক এমপি শামসুল ইসলাম ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।

এদিকে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার নাশকতা মামলায় প্রায় তিন বছর আগে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে আসামি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৯ অক্টোবর এসআই সালাউদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, কাপাসিয়া সদরের তরগাঁও মেডিকেল মোড় এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য জড়ো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে। পরে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তাদের ফেলে যাওয়া অবিস্ফোরিত চারটি ও বিস্ফোরিত একটি হাতবোমা উদ্ধার করা হয়।

মামলায় ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে। ১৮ নম্বর আসামি আমিন উদ্দিন মোল্লা উপজেলার ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের খিরাটি গ্রামের আশরাফ আলী মোল্লার ছেলে। আমিন উদ্দিন মোল্লা নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে অবসর নেন। অবসরের পর তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। আমিন উদ্দিনের জামাতা মোজাম্মেল হক বলেন, ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি তাঁর শ্বশুর মারা গেছেন। মারা যাওয়ার ২ বছর ৯ মাস পর তাঁকে মামলায় আসামি করা হয়েছে!

মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার ব্যাপারে জানতে চাইলে কাপাসিয়া থানার ওসি আবু বকর মিয়া বলেন, আমিন উদ্দিনের ছোট ভাইয়ের জায়গায় তাঁর নাম ঢুকে পড়েছে। বিষয়টি জানার পর আদালতে সংশোধনী পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্‌ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ বলেন, এটি হচ্ছে গায়েবি সরকারের গায়েবি কারসাজি। ক্ষমতায় থাকতে যত ধরনের অপকর্ম আছে, তার সবটাই তারা করছে। 

একই রকম মামলা হয়েছে ৩ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায়। স্থানীয় জামায়াত নেতা দ্বীন ইসলাম ভূঁইয়াকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর কারাগারে পাঠান আদালত। তাঁকে ২০২১ সালের মার্চে দায়ের করা হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কারাগারে থাকা এ ব্যক্তিকে ৩ নভেম্বর দায়ের মামলায় আসামি করা হয়।

মামলাটির বাদী এমদাদুল হক পলাশ নামে এক ব্যক্তি। তাঁর দায়ের করা এজাহার অনুযায়ী ৩ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের সময় ‘একদল দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতিকারী এবং অতিশয় হিংস্র প্রকৃতির’ লোক পৌরসভার পুরান বাজার এলাকায় সমাবেত হয়। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ওইসব ব্যক্তি বাদী এবং সাক্ষীদের ওপর ককটেল হামলা চালায়। লাঠির আঘাতে বাদী রক্তাক্ত হন। দ্বীন ইসলাম ওই মামলার ৫২ নম্বর আসামি। তিনিও হামলা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাদী এমদাদুল হক পলাশ। কারাগারে থাকা ব্যক্তি কীভাবে হামলা করলেন– প্রশ্নে তিনি দাবি করেন, তাঁর কাছে হামলার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

একই মামলার ৪৪ নম্বর আসামি আল-আমিন পবিত্র ওমরাহ পালনে সপরিবারে সৌদি আরবে ছিলেন। ২ নভেম্বর দেশে ফেরার দু’দিন পর এলাকা থেকে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আত্মীয় আতাউর রহমান সরকার। বিদেশে থাকা ব্যক্তি কী করে হামলা করেছেন– প্রশ্নে এমদাদুল হক পলাশের দাবি, ভিসার জাল কাগজ বানানো যায়। তাঁর ভাষ্য, আদালতের জাল কাগজও বানানো যায়।









মন্তব্য