ডেইলি বাংলা টাইমস :
প্রকাশিত : ২০২৫-০৯-৩০ ১৬:৩০:২৪
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এটি স্থায়ী নয় এবং প্রয়োজনে যেকোনো সময় প্রত্যাহার করা হতে পারে।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলন চলাকালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত সাংবাদিক ও ‘জেটিও’ মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী হাসান। প্রায় ৩৫ মিনিটের ওই আলোচনায় ড. ইউনূস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং বৈদেশিক সম্পর্কসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে ড. ইউনূস বলেন, আমরা দলটিকে নিষিদ্ধ করিনি। দলটি এখনও আইনগতভাবে বৈধ। কেবল এর রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কাজনক উৎস হতে পারে। এ কারণেই সাময়িকভাবে দলটিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
মেহেদী হাসান জানতে চান, এই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কণ্ঠস্বর রোধ করছে কিনা। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি বলব না লাখ লাখ (সমর্থক)। তাদের কিছু সমর্থক রয়েছে, তবে আমি নিশ্চিত নই, এখন তাদের প্রকৃত সংখ্যা কত। অনেকেই শুধু ক্ষমতার কাছে থাকতেই দলটির সঙ্গে ছিলেন।
তবে তিনি এও বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ভোটার হিসেবে অধিকার রাখবেন এবং অন্য যেকোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
ড. ইউনূস অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা ছিল না। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ওই সময় প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়। তিনি বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) একটি শব্দও বলেনি, কোনো দুঃখপ্রকাশ করেনি। এসব কারণেই স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্তকে ন্যায্য বলে মনে করছি।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা বেড়েছে বলে আন্তর্জাতিক মহলে যে সমালোচনা উঠেছে, সে বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, এটি ভুয়া খবর। আমাদের দেশে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে। কখনো কখনো জায়গা বা পারিবারিক বিরোধ হয়, তবে পরিকল্পিত বা কাঠামোগত কোনো হিন্দু-বিরোধী সহিংসতা চলছে, এমনটা বলা ভুল।
এ সময় তিনি এই তথ্য ছড়ানোর জন্য ভারতের কিছু মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচারের অভিযোগ তোলেন।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ছাড়া সকল দেশের জন্য বৈধ’ বাক্যটি পুনঃস্থাপন করা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। এই লাইন শেখ হাসিনার আমলে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় চলমান সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি সরাসরি বলেন, এটা ভয়াবহ, এটা গণহত্যা। শিশুরা মারা যাচ্ছে, মানুষ না খেয়ে আছে। এই দৃশ্য বিশ্ববাসী দেখছে, কিন্তু কেউ কিছু করছে না, এটা লজ্জার।
সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য কিনা—এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এটি নোবেল কমিটির সিদ্ধান্ত। তারাই বিচার করবে।
সাবেক ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)’ নিয়ে প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, তিনি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে চান। যদি আমি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কথা বলি, তাহলে পক্ষপাতদুষ্ট মনে হবে। আমি কেবল আওয়ামী লীগ নিয়ে মন্তব্য করি, কারণ তারা এখন নির্বাচনের বাইরে।
সমালোচকরা এনসিপিকে ইউনূসের মদদপুষ্ট দল হিসেবে দেখলেও তিনি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, হ্যাঁ, নাহিদ একসময় সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। কিন্তু এটি তার দল, তারাই নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে।