ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-০৬ ০০:২৬:২২




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-০৬ ০০:২৬:২২




  • জাতীয়
  • কর্মী পাঠানো নিয়ে প্রতারণার খবরে চটেছে মালয়েশিয়া!.

কর্মী পাঠানো নিয়ে প্রতারণার খবরে চটেছে মালয়েশিয়া!

কর্মী পাঠানো নিয়ে প্রতারণার খবরে চটেছে মালয়েশিয়া!


শ্রমিক পাঠানো বন্ধের জট কবে খুলবে কেউ জানেন না ৩১ মে ছিল মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর শেষ দিন। প্রবাস যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এদিন বিমানবন্দরে এসে জড়ো হন হাজার হাজার কর্মী। কিন্তু বিমানের টিকিটসহ বিভিন্ন জটিলতায় আটকে দেশটিতে পাড়ি জমাতে পারেননি প্রায় ৩৩ হাজার কর্মী। এদের মধ্যে বেশিরভাগ কর্মী ভিসা পেলেও বিমানের টিকিট নিয়ে গড়িমশি করেছে এজেন্সিগুলো। অভিযোগ রয়েছে সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের কয়েকগুন টাকা নেওয়ারও। অর্থাৎ মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের কাছ থেকে ৭৮ হাজারের জায়গায় আদায় করা হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ফলে নানাভাবে প্রতারিত হয়েছেন তারা। 

এদিকে এজেন্সগুলোর প্রতারণার বিষয়গুলো ইতোমধ্যে জানতে পেরেছে মালয়েশিয়া সরকার। ফলে বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ তারা। কর্মীদের সঙ্গে এমন প্রতারণার বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না মালয়েশিয়া। যা প্রকাশও করেছে প্রতিনিধির মাধ্যমে। দেশটি বলছে, কর্মী পাঠানোর নামে প্রতারণা করেছে— এমন এজেন্সিগুলোকে আইনের আওতায় আনতে হবে। দিতে হবে কঠোর শাস্তিও। শুধু তাই নয়, দেশটিতে যারা কর্মী হিসেবে গেছেন তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হবে। 


বুধবার (৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে প্রবাসী প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী সাথে দেশটির বাংলাদেশস্থ হাইকমিশনার সৌজন্য সাক্ষাত করেন। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। তাতে হাইকমিশনার জড়িত এজেন্সিগুলোর শাস্তির জন্য সরাসরি মন্ত্রীকে বলেন। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 


এদিকে বিষয়টি নিয়ে সংসদে কথা বলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী যেতে না পারার বিষয়টি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রকৃত ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জড়িত এজেন্সিগুলো এবং না যেতে পারা কর্মীদের ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য পেতে গণবিজ্ঞিপ্তিও দিয়েছেন তারা। 

প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে— বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাইকমিশনার মন্ত্রীকে বলেন যেন এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়। একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তার কথায় এটা স্পষ্ট হয়েছে; তারাও এজেন্সিগুলোর প্রতারণার বিষয়টি জেনেছে। শুধু তাই নয়, দেশটি এই প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি কী করছে, কী রিপোর্ট দিলো তা পর্যবেক্ষণ করবে। শেষে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কি না তাও জানতে চাইবে মালয়েশিয়া। 


অপর দিকে মালয়েশিয়ান হাইকমিশনারের প্রতিটি দাবির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রকৃত ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জড়িত এজেন্সিগুলো এবং না যেতে পারা কর্মীদের ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য পেতে গণবিজ্ঞিপ্তিও দিয়েছেন তারা। 


তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন— হাইকমিশনারের দাবিগুলো মন্ত্রী কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। তারা মনে করেন, এর আগেও মালয়েশিয়া নিয়ে সিন্ডিকেট হয়েছিল। বিভিন্ন এজেন্সি কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা, কিন্তু সে সব ঘটনায় তেমন কোনো শাস্তি হয়নি। এছাড়া শাস্তির নজিরও নেই। 


মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার ইতোমধ্যে জেনে গেছে বাংলাদেশ থেকে তাদের দেওয়া কোটা পূরণ হয়নি। আর যেতে পারেনি প্রায় ৩৩ হাজার জন কর্মী। বিষয়টি নিয়ে তারাও চিন্তিত। কিন্তু তাদের এই মুহূর্তে কিছুই করার নেই। কারণ আরও ১৪টি দেশ থেকে তারা কর্মী নিয়েছে। সকলকে তারা যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল; তা শেষ হয়েছে গত ৩১ মে। ফলে সময় আর বাড়ছে না। দেশটির শ্রমবাজার আগামীতে কবে খুলবে— সে বিষয়েও কিছু বলেননি হাইকমিশনার। তবে তিনি মন্ত্রীকে আশ্বাস্ত করেছেন, বাংলাদেশ থেকে যেতে না পারা কর্মীদের ব্যাপারে তিনি তার সরকারকে জানাবেন।  

বুধবারের বৈঠকে হাইকমিশনার আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ যারা এখন গেছেন তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ চলছে। পাশাপাশি তারা কাজ পাচ্ছেন কি না এবং নিয়োগ দেওয়া কোম্পানিগুলো ঠিক মতো বেতন দিচ্ছে কিনা— বিষয়গুলো দেখভাল করবে। 

এদিকে মালয়েশিয়া যেতে না পারা প্রায় ৩৩ হাজার কর্মী ও তাদের সঙ্গে হওয়া প্রতারণার দায় নিতে নারাজ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)। বিষয়টির জন্য প্রবাসী মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ান সরকারের ওপর দায় চাপাচ্ছে সংস্থাটি। যদিও বায়রার নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন— ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করবেন ও তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু জড়িত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি।  

গত মার্চ মাসে মালয়েশিয়া জানিয়েছিল, ৩১ মে দেশটিতে কর্মী পাঠানোর শেষ সময়। কিন্তু বিষয়টি আমলে নেয়নি বায়রা। ফলে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এছাড়াও অনেক এজেন্সি ভেবেছিল বেঁধে দেওয়া সময়ের পরও তারা কর্মী পাঠাতে পারবেন। কিন্তু তা হয়নি। ফলে তাদেরও বিপাকে পড়তে হয়েছে। তবে এজেন্সিগুলো অধিকাংশ কর্মীর কাছ থেকে দুই থেকে তিন মাস আগেই টাকা নিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে তড়িঘড়ি শুরু করে ভিসা ও টিকিটের জন্য। তবে ফ্লাইট কম থাকায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। 

বায়রার দাবি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে এবার লাইসেন্স পেয়েছিল ১০১টি এজেন্সি। এদেরকে বাছাই করেছিল মালয়েশিয়ান সরকারই। 


তবে সূত্র বলছে, মালয়েশিয়া নয়, মূলত বায়রাই এসব লাইসেন্স বাছাই করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়াকে পাঠিয়েছিল। ফলে তারা ১০১টি এজেন্সিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয়। এরমধ্যে বর্তমান ও সাবেক মিলে চারজন সংসদ সদস্যের এজেন্সিও রয়েছে। গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে এলেও বিষয়টি আমলে নেয়নি তারা। 









মন্তব্য