ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-০৫-২৪ ২৩:৩৪:৩৬




ডেইলি বাংলা টাইমস :


প্রকাশিত : ২০২৩-০৫-২৪ ২৩:৩৪:৩৬




নতুন ধানে বাজিমাত

নতুন ধানে বাজিমাত




উচ্চ ফলনশীল বিনা-২৫ জাতের ধান যশোর জেলায় এবার প্রথম চাষ হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে জেলার আট উপজেলায় প্রায় তিন একর জমিতে এ ধান চাষ করা হয়। প্রথমবার চাষেই বাজিমাত করেছে ফলনে।

এ জেলায় প্রতি বিঘায় গড়ে ২৪ মণ ধান উৎপাদিত হয়েছে। এতে কৃষক খুশি, খুশি কৃষি কর্মকর্তারাও। আগামী মৌসুমে কৃষক ব্যাপকহারে এ ধানের চাষ করবেন বলে কৃষি কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

উচ্চ ফলনশীল এই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল দেশে প্রচলিত চালের মধ্যে সবচেয়ে সরু। পূর্বের পরীক্ষিত বিনা-৫০ জাতের ধান থেকেও এর মান এবং ফলন ভালো।

এ ধানের উদ্ভাবক বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাকিনা খানম।

বাংলাদেশে সরু চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সবই আমদানি নির্ভর। এ অবস্থায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং বাইরে রফতানির লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের একদল বিজ্ঞানী সরু চালের ধান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর নানা গবেষণা শেষে বিনা-২৫ জাতের জাতটি অবমুক্ত করা চলতি বোরো মৌসুমে।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পদ্মপুকুর গ্রামের কৃষক নুকুল পাল ৩৩ শতক জমিতে এবার চাষ করেন উচ্চ ফলনশীল বিনা-২৫ জাতের ধান। তিনি বলেন, ‘ফলন খুব ভালো হয়েছে। প্রায় ২৪ মণ ধান পেয়েছি। এক মণ বাদে কাঠ শুকানোর মতো শুকিয়েও ২২ মণ বীজ রেখেছি। এরই মধ্যে ৬ মণ বীজ বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতি কেজি বীজ ৩৫ টাকা বিক্রি করছি। যার মণ পড়ে ১৪০০ টাকা।’

তিনি আরো বলেন, ‘এক মণ ধানের চাল করেছি। এর ভাত খুবই চিকন ও নরম। আর স্বাদ অন্য সব চালের থেকে ভালো। কৃষক এ ধান চাষে লাভবান হবে। আগামীতে চাষ বৃদ্ধি পাবে।’

কৃষক নুকুল পাল বলেন, ‘এ ধান চাষে সার ও কীটনাশক কম লাগে। তবে রোপণ করার সময় গোছে চারা একটু বেশি দিতে হয়। আর এ ধানের খড় গরু খাচ্ছেও ভালো।’

দেয়াড়া গ্রামের কৃষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে উচ্চ ফলনশীল বিনা-২৫ জাতের ধান চাষ করে লাভবান হয়েছি। এ জাত উদ্ভাবনের ফলে কৃষক উপকৃত হবে।


যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, মাসুম বিল্লাহের প্লটে কিছু মাজরা পোকা আক্রমণ করেছিল। তারপরও কাঙ্খিত ফলন হয়েছে। ৩৩ শতক জমিতে প্রায় ২৩ মণ ধান হয়েছে।

তিনি আরো জানান, বিনা-২৫ ধানের বৈশিষ্ট্য হলো রোগ বালাই সহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকাল। এছাড়া এ জাতের ধানের বীজ কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষণ সম্ভব হওয়ায় নতুন উদ্ভাবিত জাতটি সারাদেশে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি বিভাগ। বিনা-২৫ ধান একদিন সরু চালের বাজার দখল করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যশোর কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য) আবু তালহা জানান, চলতি মৌসুমে যশোরে আট উপজেলায় বীজ সহায়তা প্রকল্পের আওতায় আট বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে উচ্চ ফলনশীল বিনা-২৫ জাতের ধান চাষ করা হয়। এরই মধ্যে সব উপজেলায় এ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। আশানুরূপ ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৭ দশমিক ২৩ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। বিঘা হিসেবে প্রায় ২৪ মণ।

তিনি আরো বলেন, এই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল দেশে প্রচলিত চালের মধ্যে সবচেয়ে সরু। এ চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই কারণে কৃষকের মধ্যে এ ধান চাষে আগ্রহ রয়েছে। এবার পরীক্ষামূলক চাষে উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে রাখা হয়েছে। অন্য কৃষকরা এ বীজ সংগ্রহ করছেন। ফলে ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। আগামী মৌসুমে যশোর জেলায় উচ্চ ফলনশীল বিনা-২৫ জাতের ধান চাষ অনেক বৃদ্ধি পাবে।









মন্তব্য