ডেইলি বাংলা টাইমস :
প্রকাশিত : ২০২৪-০৭-১৪ ২২:৩৯:৫৯
সত্যপ্রকাশ ডেস্ক, যুক্তরাষ্ট্র: ফের আলোচনায় এসেছেন বিএনপির দুই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন ওরফে জুম খোকন ও হুমায়ুন কবির ওরফে রেড হুমায়ুন। এবার তাদের কপাল পুড়েছে কার্ড ও নারী কেলেংকারিতে জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হওয়ায়। প্রসঙ্গত, দলীয় কাউন্সিলসহ যাবতীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জুমে পরিচালনার কারণে মি. খোকনকে জুম খোকন এবং নিয়মিত নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত করায় মি. কবিরকে ডাকা হয় রেড হুমায়ুন নামে। কথিত আছে, জুম খোকন রেড হুমায়নকে গুরু মানেন এবং তার ছায়াতেই টিকে আছেন।
জুম খোকন ও রেড হুমায়ুন
জানা গেছে, বেলজিয়াম বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান লিটনের কাছ থেকে দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন জুম খোকন ও রেড হুমায়ুন। জুম খোকন মি. লিটনের কাছে রেড হুমায়ুনের ব্যাংক কার্ডের ছবি পাঠান এবং তাকে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে টাকা প্রেরণ করতে বলেন। মি. লিটনকে ভয়ভীতি ও পদের লোভ দেখান রেড হুমায়ুন ও জুম খোকন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইদুর রহমান লিটন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এদিকে কেন্দ্রিয় বিএনপির অন্য একজন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রাশেদুল হকের কাছ থেকেও হুমায়ুন-খোকন সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। মি. হক ইতোমধ্যে এ দুই নেতার বিরুদ্ধে দলের হাইকমান্ডে নালিশ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, পদপদবীর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ ও আফ্রিকার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সময়ে সময়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন জুম খোকন যার ভাগ পেয়েছেন রেড হুমায়ুনও। কেন্দ্রের ক্ষমতায় বিএনপির এ দুই নেতা বহুদিন যাবত প্রবাসে দলটির হর্তাকর্তা বনে বসে আছেন। তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে যখন যা খুশি করলেও অদৃশ্য এক শক্তির সহায়তায় জুম খোকন ও রেড হুমায়ুন টিকে আছেন বহাল তবিয়তে। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে ইউএসএ বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘুষ হিসেবে মি. খোকনকে ডলার পাঠিয়েছে—প্রমাণসহ এমন খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও জুম খোকনের বিরুদ্ধে দল কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ইউরোপের এক নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, পদ বিক্রির পাশাপাশি রেড হুমায়ুনকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন তিনি। জুম খোকন তাদের বলেন, হুমায়ুন কবির দলীয় কাজে ইংল্যান্ডের বাইরে যাবেন। চেয়ারম্যান সাহেব তার প্লেইন টিকিট, হোটেল ও হাতখরচের অর্থ দিতে বলেছেন আপনাকে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ ধরে রাখতে হলে হুমায়ুনকে অবশ্যই টাকা দিতে হবে।
জুম খোকন ও রেড হুমায়ুনের চাঁদাবাজির তথ্য ফাঁস
ম্যাকডোনাল্ডসের কর্মচারী মি. খোকন এখন অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক। সর্বশেষ বিএনপির ফরেইন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটিতে বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে নির্বিচারে লোক ঢুকিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন জুম খোকন ও রেড হুমায়ুন। ইংরেজিতে দুকলম লিখতে পারে না বা দুবাক্য বলতে পারে না—এমনসব ব্যক্তিরাও কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। এদের অনেকের লেখাপড়ার দৌড় এসএসসিরও নিচে। কেবল খোকন-হুমায়ুনের আশীর্বাদে তারা ঢুকে গেছেন প্রেস্টিজিয়াস এ কমিটিতে। এ নিয়ে ভয়ংকর তোলপাড় চলছে বিএনপির অভ্যন্তরে। দলের হাইকমান্ডও চরম বিব্রত ও ক্ষুব্ধ বলে জানিয়েছেন শীর্ষ এক নেতা।
বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যমতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র জুম খোকন প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হয়েছিলেন পেছনের দরজা দিয়ে। এরশাদ সরকারের আমলে জাতীয় ছাত্র সমাজের কর্মী ছিলেন তিনি। পরে ভোল পাল্টে ছাত্রদলে যোগ দেন। নিয়মিত চাঁদাবাজি করে ছাত্রাবস্থাতেই পীর ইয়ামেনী হকার্স মার্কেটে দুটি দোকানের মালিক হন আজকের জুম খোকন। তার সময়কার এক ছাত্রনেতা জুম খোকনকে ছিঁচকে রাজনীতিবিদ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, খোকন কখনোই মেধাবী ছাত্র ছিলো না। সে একজন সুযোগসন্ধানী।
অন্যদিকে হুমায়ুন কবির সর্বমহলে পরিচিত একজন লম্পট ও নারীলোভী মানুষ হিসেবে। দলীয় দায়িত্ব নিয়ে বিদেশ সফরে গিয়ে রেড হুমায়ুন হোটেলে এসকর্ট নিয়ে এসে ফুর্তি করেন নেতাকর্মীদের টাকায়। ম্যাসাজ সেন্টারে গিয়ে শরীর না টিপালে তার ঘুম হয় না। তার এক সহকর্মী এ প্রতিবেদককে জানান, ইন্ডিয়া যাওয়ার পথে রেড হুমায়ুন থাইল্যান্ডে যাত্রাবিরতি নেন থাই নারীদের সাথে সেক্স করার জন্য। রেড হুমায়ুন দলীয় পদ দেওয়ার নাম করে দেশ-বিদেশে বিএনপির অনেক নারী নেত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এ প্রতিবেদকের হাতে তার প্রমাণ রয়েছে। দলের অনেক সিনিয়র নেতা এসব জেনেও অজ্ঞাত কারণে চুপ থাকেন।
রেড হুমায়ুনের নারী কেলেংকারির তথ্য ফাঁস
কানাঘুষা আছে, রেড হুমায়ুন বিএনপিতে ঢুকেছেন বিদেশী একটি গোয়েন্দা সংস্থার পেইড এজেন্ট হিসেবে। বিএনপির চরিত্রহীন ও বোতলবাজ কয়েকজন নেতার সাথে সখ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হওয়ায় দলে তার বিস্ময়কর প্রমোশন মিলেছে। ভারতে গিয়ে শহীদ জিয়া ও বিএনপির আদর্শের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য রাখলেও রেড হুমায়ুনের টিকিটি কেউ ছিঁড়তে পারেনি, কারণ তাকে ব্যাকিং দেয় বিদেশী একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতা। রেড হুমায়ুন কখনো কোন উপযুক্ত চাকরিতে ছিলেন না। একসময় ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে নওফেল জমিরের প্রতিষ্ঠান জমির টেলিকমে দলীয় কোটায় কাজ করতেন। কিন্তু অর্থ তছরুপ ও চরিত্রহীনতার কারণে নওফেল জমির তাকে বের করে দেন। তবে উপার্জন না থাকলেও লন্ডনে বাড়ি কিনেছেন হুমায়ুন কবির।
রেড হুমায়ুনকে একজন মানসিক রোগী হিসেবে বর্ণনা করে তার এক সহকর্মী বলেন, সে প্রায়শই নিজে নিজে বিড়বিড় করে কথা বলে। কথায় কথায় জিয় জিয় করে। বাংলাদেশের রাজনীতি করলেও দেশ সম্পর্কে তার জ্ঞান শুন্যের কোঠায়। তবে রেড জোনের খোঁজখবর ভালোই জানে। শমসের মবিন, মুশফিক ফজল আনসারী, ব্যারিস্টার এম এ সালাম, জাহিদ এফ সরদার সাদী ও মাহিদুর রহমানকে সে খেয়ে দিয়েছে। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সহ আরও অনেককে খাবে।
রেড় হুমায়ুন ও জুম খোকনকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির প্রবাসী নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, এরা দলের শত্রু। এদেরকে এখনই দল থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
অভিযোগ সম্পর্কে আনোয়ার হোসেন খোকন ও হুমায়ুন কবিরের বক্তব্য জানতে তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।