ডেইলি বাংলা টাইমস :
প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-১৪ ০১:০৯:৪১
সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩-এ মতপ্রকাশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণমূলক ধারাগুলো অপরিবর্তিত রেখে সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিমালা প্রণয়ন ফলপ্রসূ হবে না। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা-২০২৪-এ মানুষের অধিকার, বিশেষ করে বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, পেশাগত স্বাধীনতাসহ তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২৪ : পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছে আর্টিকেল নাইনটিন ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বিধিমালার পর্যালোচনা ও সুপারিশপত্রটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা মনে করি সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ নিবর্তনমূলক, অনেকাংশে অগণতান্ত্রিক এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায়। মূল আইনে এ ধরনের অসংগতি রেখে আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য অনেকটাই নিষ্ফল হয়ে যাবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা ২০২৪ চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সব অংশীজনের উদ্বেগ, মতামত ও পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে এবং অর্থপূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ সংশোধন করতে হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিছু ক্ষেত্রে নামমাত্র পরিবর্তন এনে ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। মানুষের অধিকার নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসাবে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ এবং প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা-২০২৪-এ আমাদের জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির কাঠামো সম্পর্কে যে ধারণা দিচ্ছে, তা অত্যন্ত অস্পষ্ট। প্রস্তাবিত জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি, এর পরিচালক এবং জাতীয় সাইবার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমের দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পর্কে বিক্ষিপ্তভাবে ধারণা দিলেও বৃহত্তর পরিসরে সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির সাংগঠনিক কাঠামো কী হবে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে ব্যর্থ। বিশ্বে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের অনুসৃত পদ্ধতিতে যে প্রযুক্তিগত ও পদ্ধতিগত অগ্রগতি ও আধুনিকায়ন হয়েছে, তা প্রস্তাবিত নীতিমালায় প্রতিফলিত হয়নি।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, কম্পিউটার ফরেনসিক, ডিস্ক ফরেনসিক, মোবাইল ডিভাইস ফরেনসিক, ডেটাবেজ ফরেনসিক, ডিজিটাল ইমেজ ফরেনসিক, ডিজিটাল অডিও/ভিডিও ফরেনসিক, নেটওয়ার্ক ফরেনসিক, ফাইল সিস্টেম ফরেনসিক, মেমোরি ফরেনসিক, ই-মেইল ফরেনসিক, ম্যালওয়্যায় ফরেনসিক এসব কিছুর জন্য একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। সব সমস্যার এক সাধারণ নীতির অনুসরণ ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা ব্যাহত করবে।
সংবাদ সম্মেললনে দেওয়া প্রস্তাবনা ও সুপারিশগুলোর মধ্যে বিধিমালাটি আমাদের সীমিত অর্থনৈতিক, প্রাযুক্তিক সক্ষমতা এবং মানবসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পুনর্বিবেচনা করা উচিত। সাইবার নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ন্যূনতম ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত এবং প্রযুক্তিগত যোগ্যতার বিধিমালা দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত। দেশের ভেতর এবং বাইরে থেকে ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহের জন্য বিধিমালায় আইনি কার্যবিধি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যাতে ডিজিটাল সাক্ষ্য আদালত কর্তৃক সহজেই গৃহীত হতে পারে। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির একটি কার্যকর ও অর্থপূর্ণ সাংগঠনিক কাঠামো থাকা দরকার। নতুন ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা না করে বর্তমান ফরেনসিক ল্যাবটিকে আধুনিক যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার এবং লোকবল দিয়ে সমৃদ্ধ করা উচিত। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উপযুক্ত সময়ে নতুন ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা যেতে পারে। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি, জাতীয় সাইবার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম এবং ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের কার্যক্রমে যাতে নাগরিকদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সে সংক্রান্ত মানবাধিকার সুরক্ষা বিধান প্রস্তাবিত বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আর্টিকেল নাইনটিনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম এবং টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
আর্টিকেল নাইনটিনের আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, ‘আইন প্রণয়নে আমরা অনেক তাড়াহুড়ো করি। একের পর এক আইন করেই যাচ্ছি এবং কোনোটাই চূড়ান্ত হচ্ছে না। দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিশেষ কোনো গুণগত পরিবর্তন ছাড়াই সরকার নামকরণে ‘ডিজিটাল’-এর পরিবর্তে ‘সাইবার’ শব্দটি ব্যবহার করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’টি করেছে। সেক্ষেত্রে একটি ভ্রান্ত আইনের ওপর নির্ভর করে এ বিধিমালা প্রণয়ন খুব একটা কাজে আসবে না।